বিদ্রোহ: বুড়োর হাট এলাকায় বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অধিকাংশ আসনে রবিবার প্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি। প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় ওই দিনই নানা জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়। সোমবারও নানা কেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।
কুলতলি
কুলতলির বিজেপি প্রার্থী মিন্টু হালদারের বিরুদ্ধে এ দিন জামতলা মোড়ে বিক্ষোভ চলে। কয়েকশো কর্মী-সমর্থক বিক্ষোভে সামিল হন। তাঁদের দাবি, মিন্টু প্রার্থী হিসেবে একেবারেই অযোগ্য। তাঁর বিরুদ্ধে দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। তার উপরে তিনি এলাকার বাসিন্দাই নন। এ রকম একজন প্রার্থীকে মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় বিজেপি নেতা উত্তম হালদার বলেন, “আমরা চাই, স্থানীয় কেউ প্রার্থী হোক। বাইরে থেকে প্রার্থী দিলেও আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জনপ্রিয় কেউ বা সমাজে প্রতিষ্ঠিত কাউকে প্রার্থী করা হোক। এ রকম একজন অযোগ্য প্রার্থীর হয়ে লড়াই করা সম্ভব নয়।” ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিজেপি নেতা রতন নস্কর জনসঙ্ঘের ব্যানারে ভোটে লড়াই করার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রার্থী বদল না হলে নির্দল হিসেবে ভোটে লড়ার কথা জানিয়ে দেন এ দিন বিক্ষোভে উপস্থিত বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
জয়নগর
জয়নগরে এ বার বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন রবিন সর্দার। তিনি আরএসএসের প্রচারক ছিলেন। পরে বিজেপিতে যোগ দেন। বর্তমানে বিজেপি পরিচালিত মায়াহাউরি পঞ্চায়েতের প্রধান। তবে বিধানসভায় প্রার্থী হিসেবে তাঁকে মানতে পারছেন না কর্মী-সমর্থদের একাংশ। সোমবার প্রার্থী বদলের দাবিতে বুড়োর হাট এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষুব্ধদের দাবি, একটি অঞ্চলের বাইরে রবিনের তেমন পরিচিতি নেই। তা ছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগও রয়েছে। বিজেপি নেতা দেবতোষ আচার্য্য বলেন, “জয়নগর বর্ধিষ্ণু এলাকা। আমরা চাই এখানে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে প্রার্থী করা হোক। রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আমরা প্রার্থী বদলের আবেদন জানিয়েছে।”
মন্দিরবাজার
মন্দিরবাজারে বিজেপি প্রার্থী করেছে দিলীপ জাটুয়াকে। এক সময়ে তৃণমূলের দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন দিলীপ। পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। বছরখানেক আগে তিনি পদ্ম শিবিরে যোগ দেন। তবে দিলীপকে প্রার্থী হিসেবে পছন্দ নয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। প্রার্থী বদলের দাবিতে সোমবার মন্দিরবাজারের বিজয়গঞ্জ বাজারে গেরুয়া পতাকা হাতে মিছিল করে বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের দাবি, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে প্রার্থী করতে হবে। বিজেপি নেতা অশোক পুরকাইত বলেন, “প্রার্থী বদলের ব্যাপারে আমরা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। নেতৃত্বের তরফে আমাদের কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছে।”
ক্যানিং পশ্চিম
ক্যানিং পশ্চিমে এ বার বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন অর্ণব রায়। রবিবার বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন বিজেপির এক পক্ষ। সোমবার সকালে বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী মায়া বাগের নেতৃত্বে ক্যানিং বাস স্ট্যান্ডে বিক্ষোভ দেখান কর্মী-সমর্থকেরা। পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে প্রার্থী বদলের দাবি জানান তাঁরা। কংগ্রেস, তৃণমূল ঘুরে অর্ণব মাস দু’য়েক আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বিক্ষুব্ধদের দাবি, এ রকম একজনকে প্রার্থী না করে যাঁরা দিনের পর দিন দলের জন্য কাজ করছেন, সে রকম কাউকে প্রার্থী করতে হবে। মায়া বাগ বলেন, “উনি তো সবে দলে এসেছেন। ভারতীয় জনতা পার্টির পতাকাটাই এখনও ভাল করে চিনে উঠতে পারেননি। আমরা যারা দিনের পর দিন তৃণমূলের অত্যাচার সহ্য করে দল করে আসছি তারা ওই রং বদলানো গিরগিটিকে মেনে নেব না।”
বাসন্তী
বাসন্তীর বিজেপি প্রার্থী রমেশ মাঝির বিরুদ্ধে সোমবার সকাল থেকে একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বাসন্তীর আমঝাড়া, ঝড়খালি, বাসন্তী বাজার এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। প্রার্থী বদলের দাবি নিয়ে ব্লকের বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্য অফিসে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে দেখাও করতে গিয়েছিলেন। রমেশ মাঝিকে বদল না করা হলে এই কেন্দ্র থেকে বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতাদের কেউ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। তবে এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতাদের কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।
রায়দিঘি
দক্ষিণ ২৪ পরগনারই রায়দিঘিতে শান্তনু বাপুলিকে রবিবার বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্মীদের একাংশ। প্রার্থী বদলের দাবিতে সোমবার সকালেও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চলে। এ দিনই এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব কলকাতায় হেস্টিংসে বিজেপির সদর কার্যালয়ে গিয়ে প্রার্থী বদলের দাবি তোলেন। বিজেপি নেতা বাবু চক্রবর্তী বলেন, “ওই প্রার্থী ছাড়া স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অন্য কাউকে প্রার্থী করা হলে আমরা মেনে নিতে রাজি আছি।’’ তিনি জানান, তাঁদের দাবি মেনে শীর্ষ নেতৃত্ব পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেছেন।
মন্দিরবাজারে প্রার্থী-বদল চেয়ে মিছিল। নিজস্ব চিত্র