Bengali

বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা, তৃণ-পথেই পদ্ম খসড়া

তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস অনেক দিন ধরেই বিজেপিকে ‘বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী’ তকমা দিয়ে প্রচারে নেমেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৬:২১
Share:

—ছবি সংগৃহীত।

বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন্দ্র সেই দাবি এখনও মানেনি। অথচ কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের ময়দানে দলের ৮৮ পাতার খসড়া নির্বাচনী ইস্তাহারে দাবি করছে, এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেবে তারা।

Advertisement

তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস অনেক দিন ধরেই বিজেপিকে ‘বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী’ তকমা দিয়ে প্রচারে নেমেছে। বাংলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সেই প্রচারের মোকাবিলা করতেই কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ভিন্ন পথে হেঁটে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটের ময়দানে নামতে চাইছে বিজেপি।

দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, খসড়া ইস্তাহারে কৃষি, শিল্প, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা-সহ নানা বিষয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। শিল্পের জন্য জমি নেওয়ার নীতিতে অবশ্য তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র বিরাট কোনও ফারাক নেই। বিজেপিও খসড়ায় বলেছে, রাজ্যে ক্ষমতায় এলে শিল্পের জমির জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণ যত দূর সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করবে তারা। চেষ্টা করা হবে পতিত বা কারখানার পরিত্যক্ত জমিতে শিল্প গড়ার। জমি নেওয়া হলে তার মালিককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং শিল্প গড়ার জন্য শিল্পপতিদের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে ওই খসড়ায়।

Advertisement

নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরির জন্য গত কয়েক মাস ধরে নানা ভাবে জনমত সংগ্রহ করেছে বিজেপি। কখনও বিধানসভাওয়াড়ি শিক্ষিত সচেতন মানুষদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় মত বিনিময় করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, দলের বিদ্বজ্জন সেলের আহ্বায়ক রন্তিদেব সেনগুপ্ত প্রমুখ, কখনও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলীয় সাংসদ সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে একটি ইস্তাহার কমিটি গড়েও এ বিষয়ে চর্চা করেছে দল। গত বৃহস্পতিবার থেকে আবার ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে একটি করে এলইডি রথ নিয়ে নির্বাচনী ইস্তাহারের জন্য জনমত সংগ্রহ করতে বেরিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। সেই রথগুলিতে জনমত জমা নেওয়ার বাক্স রাখা আছে। যদিও সেই বাক্সগুলি জনমত নিয়ে বিজেপি নেতাদের কাছে ফিরে আসার আগেই খসড়া ইস্তাহার তৈরি করে ফেলেছেন তাঁরা। সেই খসড়া নিয়ে রবিবার ইস্তাহার কমিটির সঙ্গে বৈঠকও করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যসভার সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব। দলীয় সূত্রের খবর, সেই খসড়ায় কিছু পরিবর্তন, পরিমার্জন করে চূড়ান্ত ইস্তাহার প্রকাশ করবেন বিজেপি নেতৃত্ব।

বিজেপির আরও দাবি, ক্ষমতায় এলে তারা রাজ্যের বাৎসরিক ঋণ ধাপে ধাপে ২০ শতাংশের নিচে নামাবে, উত্তরবঙ্গে দু’টি এবং দক্ষিণবঙ্গে চারটি শিল্প পার্ক গড়বে এবং সিএএ চালু করবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক ভাবনা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অবশ্য স্পষ্ট এই খসড়ায়। শুধু জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করার কথাই তারা বলেনি, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সংস্কৃত পড়া বাধ্যতামূলক করার কথাও খসড়ায় আছে। সেই সঙ্গেই বলা হয়েছে, ইতিহাস সংশোধন করে ‘প্রকৃত জাতীয়তাবাদী’ তথ্য তুলে ধরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাশাপাশি শ্রী রামকৃষ্ণ, অরবিন্দ এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে চর্চায় গুরুত্ব দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement