মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত মালব্য।
পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে আরেকটি ফোনালাপের অডিয়ো ক্লিপ ‘ফাঁস’ করল বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় আইটি সেলের প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গের ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম নেতা অমিত মালব্যের অভিযোগ, ফোনের একপ্রান্তে রয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য প্রান্তে, তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা শীতলখুচি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায়। যদিও ওই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা আনন্দবাজার ডিজিটাল যাচাই করেনি।
ওই অডিয়োতে শোনা যাচ্ছে, এক মহিলাকণ্ঠ (যা মমতার বলে বিজেপি-র দাবি) গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোটে শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ফোনে আলোচনা করছে। ফোনের অপরপ্রান্তের পুরুষকে (যিনি ‘দিদি’ বলে মহিলাকণ্ঠকে সম্বোধন করেছেন) পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে নানা নির্দেশও দিচ্ছেন তিনি।
এই ঘটনায় তৃণমূলের দুই রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন ফোন আড়িপাতার অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে তাঁরা কার্যত মেনে নিয়েছেন, মমতাই সেদিন গুলি চালনার ঘটনার পরে পার্থপ্রতিমের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
প্রায় দেড় মিনিটের ওই অডিয়োতে পার্থের উদ্দেশে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘ডেডবডিগুলো এখন রেখে দাও। কালকে ডেডবডিগুলো নিয়ে ‘র্যালি’ হবে। আজকে পরিবারগুলোকে বলবে, কেউ বডি নেবে না’।
মমতা ‘মাথা ঠাণ্ডা করে ভোটটা করো’ বলে নির্দেশ দিয়েছেন পার্থকে। পাশাপাশি, তিনি ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। জানতে চেয়েছেন, কারা গুলি চালাল? পাশাপাশি, পার্থকে তাঁর প্রশ্ন, ‘লোকগুলো (শীতলখুচির নিহতেরা) কারা?’ পার্থ জানিয়েছেন, গুলি ‘সিআরপিএফ’ চালিয়েছে (যদিও গুলি চালিয়েছিলেন সিআইএসএফ জওয়ানেরা)। সেই সঙ্গে নিহতদের ‘আমাদেরই লোক’ বলেও জানিয়েছেন কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি।
অডিয়ো টেপে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এফআইআর করবে ল’ইয়ার (আইনজীবী)-কে দিয়ে। নিজের ইচ্ছেমতো করবে না। এফআইআর বাড়ির লোক যেটা করবে, আমি বলে দেব আফটার ইলেকশন। এখনই পুলিশ স্টেটমেন্ট নিতে গেলে করবে না’। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘ভাল করে এফআইআর করতে হবে ল’ইয়ারের সঙ্গে কনসাল্ট করে। যাতে ওদের কমান্ডান্ট থেকে শুরু করে, এসপি থেকে শুরু করে সবক’টা ফাঁসে। এসপি-কেও ফাঁসাতে হবে। আইসি-কেও ফাঁসাতে হবে’!
সাংবাদিক বৈঠকে ওই টেপ পেশ করে বিজেপি-র দাবি, এই ফোনেই স্পষ্ট হচ্ছে শীতলখুচির ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের চক্রান্ত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মালব্যের মন্তব্য, ‘‘শীতলখুচির বুথে যারা হামলা করতে গিয়েছিল, তাদের ‘আমাদের লোক’ বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। এটাও স্পষ্ট যে, ওই দেহগুলি নিয়ে মিছিল করার উদ্দেশ্য ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। ১০ বছর যিনি মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, তাঁর মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে এই অডিয়ো ক্লিপ থেকে। যারা ভোট লুঠ করতে গিয়েছিল, তাদেরই পাশে থাকতে চাইছেন তিনি এবং তাঁর দল। দেহ নিয়ে মিছিলের যে পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন, সেটা হলে রাজ্যে বড় রকমের গোলমালের আশঙ্কা ছিল। মেরুকরণের রাজনীতির স্বার্থে রাজ্যে খারাপ ঘটনা নিয়েও যে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি নেই, সেই ভয়াবহ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে ওই অডিয়ো টেপে।’’
বিজেপি-র অভিযোগের জবাবে সুখেন্দুশেখর সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আমাদের দলনেত্রীর সঙ্গে যদি আমাদেরই দলের কোনও প্রার্থীর কথা হয়, তা হলে আপত্তির কী আছে!’’ তাঁর দাবি, মমতা ঘটনার (শীতলখুচিতে গুলি-কাণ্ড) কথা জানতেন না। পার্থপ্রতিমের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনে উত্তেজিত হয়েছেন এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘‘অমিত মালব্যের নাম ইতিমধ্যে জাল অডিয়ো এবং জাল ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কুখ্যাত হয়ে গিয়েছে। শীতলখুচির ঘটনার এতদিন পরে বিজেপি তাদের জাল অডিয়ো-ভিডিয়োর কোম্পানিতে একটি জাল অডিয়ো তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে।’’
প্রসঙ্গত এই বিধানসভা ভোট-পর্বে মমতার ফোনালাপের অডিয়ো টেপ সামনে এনেছে বিজেপি। তার মধ্যে নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পালের সঙ্গে কথোপপকথনের কথা স্বীকার করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। অন্যটি, মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ চৌধুরীমোহন জাটুয়ার সঙ্গে মমতা বলে দাবি।