দিল্লির দীনদয়াল উপধ্যায় রোডের বিজেপির সদর দফতরের নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে। ফাইল চিত্র।
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দু’টোর ঘর পেরিয়ে গিয়েছে। দিল্লির দীনদয়াল উপধ্যায় রোডের বিজেপির সদর দফতরের নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে তখনও চলছে প্রার্থী ঝাড়াইবাছাই। রাত সাড়ে ন’টার মধ্যে নৈশাহার সেরে ফেলা অনেক বিজেপি নেতার পেটেই তখন হাল্কা খিদে। বার্তা গেল ক্যান্টিনে। রাতে দলীয় দফতরের ক্যান্টিনে কাটা হল তাজা ফল। সাময়িক ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করে শেষ চার দফার প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করতে ফের বসে পড়লেন কেন্দ্রীয় ও বঙ্গ বিজেপির নেতারা।
শেষ চার দফার প্রার্থী বাছাই করতে গতকাল দু’দফায় আক্ষরিক অর্থে ম্যারাথন বৈঠক করেন বিজেপি নেতারা। সকাল ১১টায় প্রথম বৈঠকটি শুরু হয়েছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার বাড়িতে। সেই বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। মাঝে দু’ঘণ্টার বিরতি। ফের বিজেপির সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাত ন’টায় শুরু হয় প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করার কাজ। যা চলে রাত তিনটে পর্যন্ত। আজ পশ্চিমবঙ্গ সফর থাকায় রাত ১২টা নাগাদ বৈঠক থেকে বেরিয়ে বাসভবনে চলে যান প্রধানমন্ত্রী। তবে মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষদের সঙ্গে রাত তিনটে পর্যন্ত বৈঠক করেন অমিত শাহ। ছিলেন জে পি নড্ডাও।
তৃতীয় ও চতুর্থ দফার প্রার্থী বাছাই ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ তো ছিলই। এরই মধ্যে খোদ অমিত শাহের সভায় যথেষ্ট ভিড় না হওয়া নিয়ে প্রচারে নেমেছে বিরোধী দলগুলি। ভিড় হয়নি যোগী আদিত্যনাথের সভাতেও। বিভিন্ন কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে ক্ষুব্ধ, সেই বার্তা বৈঠকের আগেই পৌঁছে গিয়েছিল রাজ্যের নেতাদের কাছে। শেষমেশ অবশ্য বিশেষ বকুনি শুনতে হয়নি বঙ্গ নেতাদের। কিন্তু যে ভাবে দফায় দফায় ম্যারাথন বৈঠক চলে, তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন অনেক নেতাই। রাজ্যের এক নেতার কথায়, ‘‘বৈঠক চলছে তো চলছে। কিন্তু পেট তা মানবে কেন!’’ সম্ভবত তা বুঝেই বৈঠক যত গড়িয়েছে, দফায় দফায় খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ছিল এন্তার চা ও কফি। প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে মাথা ঠান্ডা রাখতে উড়ে গিয়েছে গ্লাসের পর গ্লাস ঘোলের সরবতও।
গতকাল দুপুরে বিজেপি নেতাদের মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা ছিল জে পি নড্ডার বাড়িতেই। মেনু ছিল ভাত, রুটি, ডাল, ফুলকপি ও করলার তরকারি, পাঁপড় ও হালুয়া। বিকেল হতেই বৈঠকের টেবিলে চায়ের সঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে পকোড়া-সিঙাড়া। দ্বিতীয় বৈঠকটি রাতে দলীয় দফতরে ৯টা থেকে শুরু হলেও, প্রধানমন্ত্রী তাতে যোগ দেন ১০টা নাগাদ। দলীয় দফতরে মূলত মোদীর পছন্দ হল ক্যান্টিনের খিচুড়ি। প্রধানমন্ত্রীর কথা মাথায় রেখে তাই খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়। সঙ্গে পুরি-তরকারি। তবে বাংলার নেতাদের জন্য ভাত-ডাল-তরকারির বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছিলেন ক্যান্টিনের কর্মীরা। রাত পৌনে ১০টার মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে দশটা থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শুরু হয় কেন্দ্রভিত্তিক আলোচনা। রাত ১২টায় বেরিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বেরিয়ে যেতেই আসে এক রাউন্ড চা-কফি। সঙ্গে পনির পকৌড়াও। মাঝে ঘণ্টা দুয়েকের বিরতি। ফের রাত আড়াইটা নাগাদ মরসুমি ফল নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখা যায় ক্যান্টিন কর্মীদের।
শুধু নেতারাই নন, দলীয় দফতরে রাতে উপস্থিত কর্মীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও ছিল গতকাল। বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির কারণে বিজেপি কার্যালয়ে আটকে পড়া সাংবাদিকেরা। বিজেপি দফতরে উপস্থিত মূলত বঙ্গজ সাংবাদিকদের জন্য ভাত-ডাল তো ছিলই, সঙ্গে পুরি-তরকারি ও হালুয়ার ব্যবস্থা করা হয়।