BJP

শুভেন্দু অধিকারী । নন্দীগ্রাম

Advertisement

আনন্দবাজার ডিজিটাল

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২১ ২১:৫৪
Share:

গ্রাম নয়, কুইন্টাল: নন্দী শুনলেই বাঙালির স্বরবৃত্ত ছন্দে ফন্দি মনে পড়ে। অমুকচন্দ্র নন্দী, আঁটে খালি ফন্দি। কিন্তু ‘নন্দী’র সঙ্গে গ্রাম জুড়ে গেলেই আন্দোলন, শহিদ আর সূর্যোদয়। তবে নন্দী আর গ্রাম নেই। মুখ্যমন্ত্রী লড়তে গিয়ে ওজন এতটাই বাড়িয়েছেন, যে রসিকজন বলছেন, ‘নন্দীকুইন্টাল’ বলা উচিত। তবে আন্দোলনভূমিকে ওজনদার প্রথম বানিয়েছিলেন শুভেন্দুই।

Advertisement

নতুন’দা: ইনিও দাদা। মিঠুন-সৌরভের পর বাংলার ময়দানে নতুন দাদা। তবে শরৎ চাটুজ্যের নতুন’দা নন। সত্যজিতের জোড়া কাটারি। দা-দা। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে দিকে দিকে ‘দাদার অনুগামী’ পোস্টার। দাদাকে তাঁর অনুগামীরা সম্ভ্রম করেন। সেই সম্ভ্রম পরিবারেও। ভাই দিব্যেন্দু তো ‘মেজদা’ বলেও ডাকতে পারলেন না এতদিনে। স্নেহশীল পিতা শিশিরও মাঝেমধ্যেই জনসমক্ষে ‘শুভেন্দুবাবু’ বলেন সেজোপুত্রকে।

তবু খুল্লতাত: বাবা শিশির ছাড়াও শুভেন্দুকে ‘দাদা’ বলে না আরও একজন। আদরের ভাইপো বিলু। সে ‘সার্বজনীন দাদা’কে ‘কাকা’ বলে।

Advertisement

অন্য ভাইপো: প্রিয় শব্দ। ইদানীং প্রায় ইষ্টনামের মতো জপ করছেন অষ্টপ্রহর। তবে ইনি অন্য ভাইপো। রাজনৈতিক ভাইপো। যুযুধান ভাইপো। প্রতিপক্ষ ভাইপো।

ওম শান্তি: এদিকেও শান্তি, ওদিকেও শান্তি। একজনের কুঞ্জে শান্তি। অন্যজনের নিকেতনে শান্তি। শুভেন্দুর আবাস কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবাস দক্ষিণ কলকাতার হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটের ‘শান্তিনিকেতন’। কিন্তু নামেই শান্তি। আসলে যে কুঞ্জ এবং নিকেতনে যে ঘোরতর অশান্তি, তা কে না জানে!

শহিদ স্মৃতিধর: নন্দীগ্রামের সমস্ত শহিদের নাম গড়গড়িয়ে বলে যেতে পারেন! এ তাঁর অহঙ্কার নয়। এ তাঁর সহজাত। তাঁর দাবি, এ নাকি তাঁর প্রাক্তন নেত্রীও পারেন না।

দিদি নয়, নেত্রী: সারা বাংলা তাঁর মমতাকে ‘দিদি’ বলে। এখন অবশ্য ‘বাংলার মেয়ে’ই চলছে। কিন্তু শুভেন্দু বরাবর ‘নেত্রী’ই বলে এসেছেন। এখন বলেন ‘মাননীয়া’।

ডিম্ভাত: ডিম চাই। ডিম। সকালে দুটো, বিকেলে দুটো হলেও আপত্তি নেই। সুসিদ্ধ হলেই হল। তা ছাড়া খাওয়ায় তেমন বাছবিচার নেই। ডাল-ভাত হলেই হল। তবে মাঝেমধ্যে বিরিয়ানি আর কষা মাংস পেলে ঘোরতর আপত্তি তোলেন না।

ডাব-সন্দেশ: গোটা অধিকারী পরিবারই ডাব-প্রিয়। তবে মেজ-অধিকারী মধ্যরাতেও ডাব খেতে ভালবাসেন। বুলেট-নিরোধক গাড়ির পিছনের ডিকিতে ডাব কেটে রাখা থাকে। সেই গাড়িতে অবশ্য মুড়ি-ছোলাও থাকে। মাঝেমধ্যে মুখে ফেলার জন্য। শুভেন্দু শরীর সচেতনও বটে। খাওয়াতে ভালবাসেন। ‘কাঁথির ভূমিপুত্র’ কোনও কর্মসূচিতে গেলে সঙ্গে অনুগামীদের জন্য কাঁথির বিখ্যাত কাজুবাদামের সন্দেশ নিয়ে যান।

মোদীকে দান: যশস্বী। যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেখা হলেই নতমস্তক। কিন্তু বাংলার ভোটের প্রচারে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই অভিধাও দান করেছেন।

সাদা মনে কাদা নেই: পরিধেয় সবসময়েই সাদা। সাদা কুর্তা-পাজামা। তবে এখন তাতে গেরুয়ার পোঁচ লেগেছে। গলায় গেরুয়া উত্তরীয়। কপালে গাঢ় গেরুয়া তিলক।

কালোও মন্দ নয়: গাড়ি কিন্তু সাদা নয়। সবসময় কালো। অন্য রাজনীতিকদের মতো তিনি কখনও চালকের পাশের আসনে বসেন না। সবসময়েই চালকের পিছনের আসনে তাঁর অধিষ্ঠান। জনশ্রুতি হল, সিট বেল্টের বাঁধনে নিজেকে বাঁধতে চান না। আবার সামনে বসলে সিট বেল্ট না বাঁধার মতো আইন-ভাঙা কাজও করতে চান না।

জুত মতো জুতো: জুতো নিয়ে অবশ্য কোনও বাছবিচার নেই। জুত মতো হলেই হল। তবে সাধারণত কালো চামড়ার জুতো পরেন। পা-ঢাকা জুতো নয়। ভেলক্রো-আঁটা জাঁদরেল চপ্পল। লক্ষ্যণীয় যে, কংগ্রেস বা তৃণমূলের অন্যান্য নেতার মতো পায়ে দামী স্নিকার্স পরেন না মেজো অধিকারী।

কমিটি ম্যান: নিজেকে সবসময় ‘কমন ম্যান’ বলতেই ভালবাসেন। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় যত মন্দির, তার প্রায় সবগুলোরই ‘কমিটি ম্যান’ শুভেন্দু। ক্লাব, দরগা, পুজো কমিটি— কিছুই বাদ নেই। এতগুলো কমিটিতে যে তিনি আছেন, তা সম্ভবত নিজেও জানেন না। অনুগামীরা বলেন, ‘দাদা’কে নিয়ে উদ্যোক্তারা কমিটির ওজন বাড়ান।

ধম্ম-কম্ম: ছেলেবেলা থেকেই ধম্ম-কম্মে মতি। এক সময় নাকি সন্ন্যাসী হওয়ার ‘ভুত’-ও চেপেছিল মাথায়। দাড়িও রাখতে শুরু করেছিলেন। বাবা শিশিরের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল মেজছেলের কাণ্ডকারখানা। তবে এখন শুধুই সুচারু গোঁফের অধিকারী। মন্দিরে-মন্দিরে যাওয়া বা যজন-যাজন তাঁর জীবনে পদ্মপাতায় আসন পাতার অনেক আগে থেকেই ছিল। কোলাঘাটে ইস্কনের রথের রাস্তা ঝাঁট দেওয়া থেকে খোল বাজিয়ে কীর্তন— সবই শুভ মানেন শুভেন্দু।

বিবেকের ডাক: কাঁথির বাড়ি শান্তিকুঞ্জের তিনতলার একান্ত-কুঞ্জ থেকে তমলুকের কার্যালয়— সর্বত্র স্বামী বিবেকানন্দের ছবি। সঙ্গে বাণী। বলেন, “অনেকেই মনে করেন আমার সন্ন্যাসীর মতো জীবন।” অকৃতদার। বাবাকে যখন আজীবন বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন, শিশির ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। বাক্যালাপ বন্ধ ছিল। কিন্তু মেজোছেলের জেদের কাছে পেরে ওঠেননি। হাতঘড়ি পরা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, টাইম তো মোবাইলেই দেখে নেওয়া যায়। আসলে গ্রামের মানুষের কাছে হাতে দামী ঘড়ি পরে যেতে চান না। স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তকে ‘সাম মন্ত্রের মতো’ স্মরণ করেন। আর ‘অখণ্ড মণ্ডলাকারং’ মনে করেন অখণ্ড মেদিনীপুরকে।

নেতা-নীতি: সাধু-সাধু ভাব যখন হয়েছিল, তখনই বাবা শিশির বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতি করে মানুষের কাজ করো।’’ ব্যাস, কলেজ রাজনীতি থেকে শুরু। তার পর পথসভা থেকে বিধানসভা, লোকসভা, মন্ত্রিসভা— কোনও কিছুই অগম্য নেই। ‘নেতা’ হওয়ার টান ছেলেবেলা থেকেই। নন্দীগ্রাম থেকে নেতাই— সর্বত্র তিনিই নেতা।

অবসর: নেই। ছোট থেকেই ছুট শুরু। রাজনীতিকে মনে করেন রাজার রাজা। তাই রাজনৈতিক লক্ষ্যে অবিচল। অবসরে অনলাইনে লোকসভার গ্রন্থাগারের ওয়েবসাইটে ঢুকে রাজনৈতিক বক্তৃতা পড়েন।

হরে কৃষ্ণ হরে হরে: পদ্মফুল ঘরে ঘরে। গোটা বাংলার জন্য এই স্লোগান নিয়ে নন্দীগ্রামে ভোট লড়তে নেমেছেন। আসলে স্লোগান নয়। এ তাঁর স্বপ্ন।

তথ্য: পিনাকপাণি ঘোষ। রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement