Parno Mitra

পার্নো মিত্র। বরাহনগর

Advertisement

আনন্দবাজার ডিজিটাল

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ১২:৪২
Share:

মামির বাড়ি ভারী মজা: বাড়ি বালিগঞ্জে। কিন্তু ভোট লড়তে নেমেছেন সেই বরাহনগরে। সদ্য মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে বরাহনগরে। কিন্তু তাতেও বাড়ি ফেরা হচ্ছে না। বরাহনগরের বিজেপি প্রার্থীকে এলাকার মধ্যেই বাড়িভাড়া নিতে হয়েছে। অসুস্থ মা আছেন বালিগঞ্জের বাড়িতে। তিনি আসতে পারছেন না। তবে বরাহনগরে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন মামি। তাঁর হাতের রান্নাও এখন জিভে লেগে গিয়েছে পার্নোর।

Advertisement

মিসিং ম্যাগি: নাহ্, টু’মিনিট্‌স নুডল্‌স নয়। পার্নোর একটি আদরের সারমেয়র নাম ‘ম্যাগি’। আরও একটি আছে। তাঁর নাম একটু ভারিক্কি— কেদারনাথ। মায়ের পাশাপাশি সেই দুই ছানার জন্যও ভোটব্যস্ত পার্নোর মন খারাপ। খুব মিস্ করছেন ম্যাগিকে। আর কেদারনাথকে। শনিবার ভোটপর্ব মিটলেই ছুট-ছুট।

খেলা নয়: অভিনয় জীবনের শুরুতেই ‘খেলা’ নামে এক ধারাবাহিকে কাজ করেছিলেন। যখন রাজনীতিতে এলেন, তখন বিধানসভা নির্বাচনের চলতি স্লোগান ‘খেলা হবে’। যা একেবারেই পছন্দ নয় পার্নোর। বস্তুত, রাগই হচ্ছে রাজনীতিকে ‘খেলা’ বলার জন্য। রাজনীতিতে আসার কিছুদিন পরেই বিধায়ক হওয়ার ভোটে প্রার্থী হয়ে যাওয়া অভিনেত্রীর গলায় উষ্মা, ‘‘অনেক খেলা হয়েছে! এ বার খেলা বন্ধ হবে! আমরাই বন্ধ করব!’’

Advertisement

নতুন সিলেবাস: রাজনীতি পার্নোর কাছে নতুন ক্লাসে উঠে নতুন সিলেবাস হাতে পাওয়ার মতো। নতুন বইয়ের ‘গন্ধ’ পাওয়ার আনন্দ আছে। সঙ্গে টেনশনও। মাঝেমধ্যেই নার্ভাস লাগে। বলছেনও, ‘‘নতুন ক্লাস। নতুন সাবজেক্ট। নতুন অধ্যায়। প্রথম প্রথম তো একটু নার্ভাস তো লাগবেই। তবে উত্তেজনাও প্রচুর!’’

লকেট-শিক্ষা: নতুন সিলেবাসে যদি প্রাইভেট টিউটর রাখতে হয়? পার্নোর পছন্দ লকেট দিদিমণি। ‘কয়েকটি মেয়ের গল্প’ নামে একটি ছবিতে এক সঙ্গে কাজ করেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং তনুশ্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিন জনই এখন গেরুয়া শিবিরে। তবে পার্নোর বক্তব্য, ‘‘তনুশ্রী অভিনয়ে আমার জুনিয়র। রাজনীতিতে ক্লাসমেট। লকেট’দি অনেক জানেন। অনেক লড়াই করেছেন।’’ তবে লকেট-তনুশ্রী দু’জনেই নির্বাচনী লড়াইয়ে ব্যস্ত। ফলে এখনও পর্যন্ত লকেট-শিক্ষার সুযোগ হয়নি। ভোটের পর সুযোগ পেলে টিউশনটা নিয়ে নেবেন।

সোজাসাপ্টা হেড স্যার: নতুন স্কুলের হেড স্যার বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পার্নোর খুব পছন্দের। ঘটনাচক্রে, তাঁর প্রচারে গিয়েই শীতলখুচি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ। তবে পার্নো হেড স্যারকে নিয়ে শ্রদ্ধাশীল, উনি সোজাসাপ্টা মানুষ। অল্প পরিচয়েই বুঝেছি, মানুষটা খুব পরিষ্কার মনের। উনি যেটা ঠিক মনে করেন, সেটাই বলেন। কোনও রাখঢাক নেই। গণতন্ত্রে সকলেরই তো মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে।’’ আরও বলছেন, ‘‘শীতলখুচি নিয়ে ওঁর কথার যে অর্থ করা হচ্ছে সেটা ঠিক নয়। উস্কানির জন্যই ওখানে ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু দিলীপদা কোনও উস্কানি দেননি। সতর্ক করেছেন। উনি স্পষ্টবাদী। তাই বিতর্ক। ওঁর স্পষ্টবাদিতা আমার খুব পছন্দের।’’

বুদ্ধির্যস্য: রাজনীতিতে নতুন হলেও তাড়াতাড়ি কায়দাকানুন আত্মস্থ করার সুনাম পেয়েছেন গেরুয়াশিবিরে। গঙ্গাবক্ষে মদন মিত্রের দোল উৎসবে বিজেপি-র তিন তারকা প্রার্থী পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়কে দেখা যাওয়ার পর তুমুল বিতর্কের সময় বুদ্ধি দেখিয়েছিলেন পার্নো। বলেছিলেন, ‘‘এটা ওঁদের ছোট্ট ভুল হয়েছে। ওঁদের হয়ে আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি। এজন্য কর্মীদের মনোবল ভাঙলেও ভুলটা কিন্তু সাময়িক।’’

আরাম মানে হারাম নয়: জামাকাপড়ের ব্যাপারে পার্নোর পছন্দ নির্ভর করে একটি বিষয়ের উপরেই— সেটা পরে আরাম হচ্ছে কি? ভোটের প্রচারে কখনও সখনও শাড়ি পরলেও বেশিটাই সারছেন সালোয়ার-কামিজে। ওটাতেই তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। আর এই গরমে সুতির পোশাক ছাড়া পরছেনই না!

মন সাদা, কাদা নেই: রঙচঙে পোশাক যে একেবারেই পরেন না, তা নয়। কিন্তু সবচেয়ে পছন্দের রং সাদা। মনে করেন সাদা মানে শুদ্ধ। সাদা মানে পরিষ্কার। হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘আমার মনটাও খুব সাদা।’’

পার্নোঞ্জনা: এক ছবিতেই হিট! অঞ্জন দত্তর ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ ছবির রাগী, খামখেয়ালি কন্যা ছিলেন পার্নো। সেই মেয়ের অবশ্য ভোটের ময়দানে দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি তাহলে কেমন? পার্নোর মতো? না রঞ্জনার মতো? জবাব আসে, ‘‘আমি কেমন জানতে হলে আমার সঙ্গে ওঠবোস করতে হবে। আমি কেমন সেটা আমিও জানি না।’’ তবে সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার গুণ রয়েছে। বলেন, ‘‘মানিয়ে নিতে না পারলে তো জীবনে চলাফেরাই করা যায় না।’’ তবে ভোটের ময়দানে কড়া রোদ্দুর মানিয়ে নিতে একটু কষ্টই হচ্ছে। বড্ড কষ্ট। জীবনের একটা বড় সময় পাহাড়ে কেটেছে। বাবা কর্মরত ছিলেন অরুণাচল প্রদেশে। মেয়ে পড়তেন কার্শিয়াঙে বোর্ডিং স্কুলে। ঠান্ডায় ঠান্ডায় বড় হওয়া পার্নোর কাছে চৈত্রের রোদ তো কষ্টকর হবেই।

রবে গোপনে: পার্নো নামটা খুব পছন্দের। কিন্তু একটা ডাকনামও আছে। বাড়িতে সেই নামেই ডাকা হয়। কিন্তু সেটা নাকি এতটাই পচা, যে মুখেও আনতে চান না। ওটা গোপনেই থাকে। বরং গোপনই থাক।

গাড়ি-টাড়ি: নিজের একটা গাড়ি আছে। ফোর্ড ইকোস্পোর্ট। সেটা ২০১৮ সালে সেকেন্ড হ্যান্ড কেনা। আর আছে বালিগঞ্জের কর্নফিল্ড রোডে একটা ফ্ল্যাট। তবে বাড়ি-গাড়ি খুব একটা টানেও না পার্নোকে।

প্রেম-ট্রেম: এখন তো গেরুয়া প্রেম। তবে একটা সময় পর্যন্ত পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। টলিউডের অনেকে বলতেন, ওই সম্পর্ক ছাদনাতলা পর্যন্ত যাবে। যদিও এখনও পর্যন্ত তা হয়নি। আর এখন ভোটের সময় বিয়ে-টিয়ের কথা কি মাথায় আসে!

গান-টান: একটু ফাঁক পেলেই গান শোনেন। ছবির রঞ্জনার মতোই বাস্তবের পার্নোর সঙ্গীতপ্রেমও সমান। সিনেমাও দেখেন খুব। সিনেমাহলে গিয়ে তো বটেই, টিভি-তে আর মোবাইলেও। তবে এখন সেসব আর হয়ে ওঠে না। ভোটের প্রচার সেরে বাড়ি ফিরলেই বেজায় ঘুম পায়।

পুজো-টুজো: বাড়িতে পুজো-আচ্চা করেন পার্নো। কিন্তু রামকৃষ্ণের ভূমি বরাহনগরে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী একটু বেশিই পুজো করছেন। শুরুটা হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দিরে পুজো দিয়ে। এর পর এলাকার কোনও মন্দির নেই, যেখানে তিনি মাথা ঠেকাতে যাননি। বাদ যাচ্ছে না শীতলামন্দিরও। এ-ও কি ভোটের প্রচার? খরখরে গলায় জবাব আসছে, ‘‘কোনও মুসলিম প্রার্থী নমাজ পড়লে সেটাও কি প্রচার বলে ধরা হবে নাকি!’’

দুইটি বৃন্তে একই কুসুম: তিনি বিজেপি-তে। অর্থাৎ পদ্মফুলে। যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তী তৃণমূলে। বৃন্ত আলাদা হতে পারে। কিন্তু বন্ধুত্বের কুসুমটি অক্ষত। হতে পারে দু’জন দু’টি রাজনৈতিক দলের সদস্য। হতে পারে প্রচারে এবং ভোটের ময়দানে সেই দুই রাজনৈতিক দলই আসল যুযুধান। হতে পারে প্রচারে একটি দল অন্য দলের মুণ্ডপাত করছে। কিন্তু তাতে কী! কিছুদিন আগেই পার্নো আর মিমি এক সঙ্গে গোয়া বেড়াতে গিয়েছিলেন। বন্ধুত্বে রাজনীতির কোনও ছায়া চান না পার্নো। মিমিও চান না। চাননি।

রন্ধনে বন্ধনহীন: যে পার্নো ভোটে লড়েন, সেই পার্নো মাঝেমধ্যে চুলও বাঁধেন। আবার রাঁধেনও। কিন্তু একেবারে ঘরোয়া মেনু। বেশি রাঁধেন না যদিও। আসলে নিজের রান্না নিজের ভাল লাগে না। ভাল খেতে ভাল লাগে। তবে সুখাদ্যের প্রতি বিশাল কোনও টান নেই। ফেভারিট মেনু ডাল-ভাত-আলুভাজা। সেটা সর্বোত্তম হয় মা রান্না করলে।

অমিত-আনন্দ: জীবনে প্রথম ভোটে লড়তে নেমে প্রচারপর্ব নিয়ে বেজায় আনন্দে। তাঁর প্রচারে রাজ্য বিজেপি-র সব নেতারা তো এসেছেনই। সঙ্গে মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীও গিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি আনন্দটা দিয়েছেন একেবারে শেষপাতে অমিত শাহ।

তথ্য: পিনাকপাণি ঘোষ, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement