শান্তিপুরে মিঠুনের রোড শো। নেই মাস্ক, পারস্পরিক দূরত্ব। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের জনসভা। তাই যাঁরা মঞ্চে উঠবেন বা মন্ত্রীর আশপাশে থাকবেন তাঁদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছিল। র্যাপিড টেস্টে জানা গেল, করিমপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ নিজেই করোনায় আক্রান্ত!
এর পরে প্রার্থী আর মঞ্চে ওঠার সুযোগ পাননি। মঞ্চের পিছনে একটি ঘরে তিনি মন্ত্রী ফিরে যাওয়া পর্যন্ত একাই বসে থাকেন। সংক্রমণ ধরা পড়ার আগে তিনি দলের যে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন, দলের তরফে তাঁদেরও সতর্ক করা হয়েছে। মন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পরে সমর ঘোষ করিমপুর হাসপাতালে যান। পরে তিনি বলেন, “হাসপাতালে আমার এবং আমার সঙ্গে থাকা সাত জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়েছি। দিন তিনেকের মধ্যে রিপোর্ট চলে আসবে বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে। শারীরিক কোনও অসুবিধা এখন আমার নেই। কিন্তু প্রচারের কাজে সমস্যায় পড়ে গেলাম। পিপিই পরে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে ভোটের কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।”
মঙ্গলবার কাঠফাটা রোদের দুপুরে বালিয়াডাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বক্তৃতা করতে উঠে রাজনাথ বলেন, “মমতাদির এখন নিজের প্রতি আস্থা নেই, তাই অযথা মোদীজিকে গালি দেন, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’।” তৃণমূল ক্ষমতায় এসে বাংলার মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর মতে, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মহিলা তাই তাঁকে সম্মান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে শুরু করে আমাদের কোনও শীর্ষস্থানীয় নেতা কখনও তাঁর উদ্দেশে কটূক্তি করেননি। কিন্তু উনি বহু জনসভায় যে ধরনের মন্তব্য করে চলেছেন, তা কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে মানায় না। ওঁর বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের কারণে পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিজেপি হিংসাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।”
রাজনাথ দাবি করে, ‘কাটমানি’ কী জিনিস তা তিনি আগে বুঝতেন না, বাংলায় এসেই জেনেছেন। তাঁর দাবি, “তৃণমূল নেত্রী ভীষণ অহংকারী। সরকারের চেয়ারে বসে অহংকারী মনোভাব নিয়ে রাজ্য চালানো যায় না। মুখ্যমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী একটা প্রতিষ্ঠান, কোনও ব্যক্তি নয়। দিদি, আপনি অহংকার ত্যাগ করুন।”
নদিয়ায় ভোট প্রচারের শেষ লগ্নে যত হেভিওয়েট নেতানেত্রী জেলায় আসা-যাওয়া করছে, ততই করোনা সংক্রমণ নিয়ে মাথাব্যথা বাড়ছে পুলিশ ও প্রশাসনের। এর আগে নরেন্দ্র মোদীর মঞ্চের কাছে ডিউটি করবেন এমন ৫০ জন পুলিশকর্মীর করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তার মধ্যে দু’জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তাঁদের হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে। সংক্রমিত হয়েছেন কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের কার্যালয়ের এক করণিকও। এ দিন কৃষ্ণনগর পুলিশ লাইনের দুই কর্মীর রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কল্যাণীর যক্ষ্মা হাসপাতালই বর্তমানে নদিয়ার একমাত্র কোভিড হাসপাতাল। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করে কৃষ্ণনগর পুলিশ লাইনের হাসপাতালে আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের জন্য একটি ২২ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “আইসোলেশন ওয়ার্ড আগেও হয়েছিল। কিন্তু সে ভাবে প্রয়োজন না পড়ায় মাঝে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার সেটা চালু করা হয়েছে।”
(সহ-প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার)