গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
ভোট মানেই ইস্তাহার। আর ইস্তাহার মানেই নানা রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। সেখানে ভোটারকে খুশি করতে ‘রোটি-কাপড়া-মকান’-এর সুবিধা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। এটাই রাজনৈতিক দলের ইস্তাহার প্রকাশের সংস্কৃতি। কিন্তু ‘সংস্কৃতি’ ইস্তাহারের বিষয়! সত্যিই নতুন ইস্তাহারে নতুন সংস্কৃতি দেখাল বিজেপি। বাংলার সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বিজেপি-র ইস্তাহারে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে চৈতন্য মহাপ্রভু, উত্তম কুমার থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর উল্লেখ। রয়েছে ‘বাংলা’ ভাষা নিয়ে বিজেপি-র ভাবনার কথা।
বিজেপি-র প্রচারে বলা হচ্ছে, তারা ক্ষমতায় এলে ‘সোনার বাংলা’ গড়বে। ইস্তাহারের নামও দেওয়া হয়েছে ‘সোনার বাংলা গড়ার সংকল্প পত্র’। কিন্তু সোনার বাংলা বলতে কী বোঝাতে চায় বিজেপি? এ নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষে বিজেপিশাসিত অন্য রাজ্যের কথা টেনে তুলনাও করা হয়েছে। যদিও বিজেপি বার বারই তাঁদের স্লোগানের ব্যাখা দিয়ে এসেছে। কলকাতায় এসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা বলেছিলেন, ‘‘সোনার বাংলা বলতে আমরা বাংলার গৌরব, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের কথা বলছি। তা ফিরিয়ে আনার কথা বলছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র সময় যে বাংলা ছিল, তার কথা বলছি। সে সময় সব দিক থেকে উন্নত ছিল বাংলা। বাংলার গৌরব, সংস্কৃতির বিশ্বজোড়া পরিচিতি ছিল। আর এখন দুর্নীতি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চলছে বাংলায়। এর থেকে পরিবর্তনের কথা আমরা বলতে চাইছি। আর সেই পরিবর্তনের মাধ্যমেই তৈরি হবে সোনার বাংলা। যে বাংলা ভারতকে নেতৃত্ব দিত, আমরা সেই বাংলা ফিরিয়ে আনব।’’
নড্ডা যেমনটা বলেছেন তার অনেকটাই ইঙ্গিত মিলেছে ইস্তাহারে। বিজেপি শুধু নানা প্রকল্প ঘোষণাই করেনি তার সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন মনীষীদের নাম জুড়েছে। সেটা ক্রীড়া থেকে শিক্ষা— সব ক্ষেত্রেই। আবার সংস্কৃতি বিষয়ক আলাদা ঘোষণাপত্রও রয়েছে। এ বার ভারত সরকারও নোবেল পুরস্কারের সমান মর্যাদার আন্তর্জাতিক সম্মান প্রদান চালু করতে চায়। যার নাম হবে ‘টেগোর প্রাইজ’। চলচ্চিত্র ক্ষেত্রের সেরা সম্মান ‘অস্কার’-এর মতো পুরস্কারও চালু করতে চায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আর সেই ঘোষণার জন্যও বেছে নেওয়া হয়েছে নীলবাড়ির লড়াইয়ের জন্য তৈরি ইস্তাহারকে। ‘সত্যজিৎ রায় অ্যাওয়ার্ড’ নামে এই সম্মানও হবে আন্তর্জাতিক মানের।
বাংলার বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের উন্নতির কথা বলে ১১,০০০ কোটি টাকার ‘সোনার বাংলা তহবিল’ গঠনের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে বাংলার সংস্কৃতি প্রচারের জন্য সমস্ত রাজ্যের রাজধানী এবং বিদেশের নির্ধারিত কিছু জায়গায় সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘গুরুদেব সেন্টার ফর কালচারাল এক্সিলেন্স’ বানানো হবে।
এ ছাড়াও বলা হয়েছে, বাংলার উৎকর্ষতা প্রদর্শনের জন্য কলকাতায় একটি বিশ্বমানের ‘সোনার বাংলা মিউজিয়াম’ তৈরি হবে। ধুমধাম করে নেতাজির জন্মদিন ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই নামের বিরোধিতা করেছেন।
গেরুয়াশিবির গঙ্গাসাগর মেলার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বাড়াতে ২,৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের পাশাপাশি ইস্তাহারে লিখেছে সোনারপুরে ‘মহানায়ক উত্তম কুমার ফিল্ম সিটি’ গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে ‘পুরোহিত কল্যাণ বোর্ড’ প্রতিষ্ঠা এবং পুরোহিতদের প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা করে সাম্মানিক দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে। সেই প্রাপ্তিযোগ থাকছে কীর্তনিয়াদের জন্যও। আবার ‘চৈতন্য মহাপ্রভু স্পিরিচুয়াল ইনস্টিটিউট’-এর শ্রীচৈতন্যের মতাদর্শ প্রচারের আশ্বাস দিয়েছে বিজেপি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসাবে ‘বাংলা’ যাতে স্বীকৃতি পায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও সংকল্প জানিয়েছে বিজেপি। একই সঙ্গে ইস্তাহারে বলেছে, সরকারের সব দলিল, আদেশ এবং চিঠির ক্ষেত্রে বাংলা বাধ্যতামূলক করা হবে।