ভোট শেষ। বালুরঘাট কলেজ থেকে ইভিএম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিএম অফিসে। নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজনীতির ভরকেন্দ্র আবার বিপ্লব মিত্রের হাতেই ফিরে এল। মাঝে কয়েক মাসের বিরতির পর গত রবিবার নির্বাচনে জেতার পরেই জেলা রাজনীতির সমীকরণ বদলে যায়।
গত লোকসভা নির্বাচনের পরেই সদলবলে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন বিপ্লব। মাত্র কয়েক মাস পরে বিজেপির মোহ কেটে যাওয়ায় এক বছরের মাথায় দলে ফিরে আসেন তৃণমূলের অন্যতম বর্ষীয়ান ও ভোট কান্ডারি নেতা বিপ্লব। এরইমধ্যে বিপ্লবের হাত ধরেই তৃণমূল যোগ দেওয়া গঙ্গারামপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক গৌতম দাস তৃণমূলের জেলা সভাপতির গদিতে বসে যান। সেই গৌতমের সভাপতির সময়েই কার্যত বিনা পদে দলে ফেরেন বিপ্লব। দলে ফিরতেই বিপ্লবের সঙ্গে গৌতমের ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হয়।
দলে ফিরলেও পদহীন থাকায় এই ঠান্ডা যুদ্ধে পেরে উঠছিলেন না বিপ্লব। তাই কার্যত গৌতমই ‘রাজ’ চালাচ্ছিলেন৷ যদিও গৌতমের একছত্র রাজ চালানো বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। জেলার চেয়ারম্যানের পদে এলেও বিপ্লবের ডান হাত কালীপদ সরকারের মৃত্যু হওয়ায় আবার কিছুটা ব্যাক ফুটে চলে যান বিপ্লব। কিন্তু গত রবিবার ভোটের ফল বের হতেই ফের চর্চার কেন্দ্রে আসেন বিপ্লব। কারণ, জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে বিপ্লব নিজে এবং তার অনুগামী রেখা রায় ও বিদায়ী বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল জয়ী হয়েছেন।
ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছেন গৌতম নিজে। হেরে যাবার পরেই জেলা সভাপতি অবশ্য ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে জয়-পরাজয়ই কার্যত শেষ কথা। ভোটে জিততেই তাই আবার বিপ্লবের বাড়ির সামনে জেলার নেতাদের লম্বা লাইন পড়েছে। জেলার সবচেয়ে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে মন্ত্রী হওয়ার দৌড়েও রয়েছেন বিপ্লব। ফলে পদে ও মর্যাদায় গৌতমের থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন বিপ্লব।
বিপ্লব অবশ্য বলেন, ‘‘বাকি আসনে কেন হার হয়েছে সেটা অবশ্যই খোঁজ নেব। তবে ভোটে জিততে হলে প্রার্থীর মুখটাও একটা ফ্যাক্টর।’’ দলবদল করা গৌতমকে যে গঙ্গারামপুরবাসী ভাল চোখে নেয়নি কার্যত সেই ইঙ্গিতই দেন বিপ্লব। এদিকে পরাজয় শেষে গৌতমও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, ‘‘কেন শহরে হারলাম তার কারণ খোঁজা উচিত দলের। তাহলেই সব পরিষ্কার হবে।’’ হারের কারণ যাই হোক না কেন, আপাতত জেলার ক্ষমতার লড়াইয়ে বিপ্লব যে কয়েক যোজন এগিয়ে গেলেন তা সবাই মানছেন।