ফাইল চিত্র।
জগদ্দলের মেঘনা মোড়ে বোমাবাজির ঘটনা রাজনৈতিক রেষারেষির জন্য বলেই দাবি করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। তৃণমূল এবং বিজেপি— দু’তরফের দুষ্কৃতীরাই জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এ কথা জানান, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ।
ঘটনা প্রসঙ্গে এ দিন পুরুলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘কাল রাতে উত্তর ২৪ পরগনার কোনও জায়গায় বোমাবাজি হয়েছে। বিজেপি কর্মীকে নিশানা করে বোমা ছোড়া হয়েছে। এই অবস্থা ঠিক নয়। এ সব বদলাবে। এই হিংসা, মাফিয়ারাজ আর চলবে না। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বলব, বাংলার পুলিশকে বলব, সংবিধানকে মাথার উপরে রাখুন।’’
বুধবার রাতে মেঘনা মোড়ের শ্রমিক বস্তির ১৬ নম্বর গলিতে ১০-১২টি বোমা পড়ে। এক কিশোর ও মহিলা-সহ তিনজন জখম হন। অশান্তি ছড়ায় সংলগ্ন এলাকায়।
ঘটনাস্থলের উল্টো দিকেই বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বাড়ি এবং কার্যালয়। বোমা পড়ার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। ঘটনার পিছনে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা জড়িত বলে পুলিশের এক এসিপির সামনেই ক্ষোভ জানান সাংসদ অর্জুন। বিজেপির দাবি, সাংসদের সামনেই দুষ্কৃতীরা এলাকায় বোমাবাজি করেছে। রাতে পুলিশের এক এসিপিকে উদ্দেশ করে অর্জুনকে বলতে শোনা যায়. ‘‘আপনারা নির্বাচন কমিশনকে পাত্তা দিচ্ছেন না। কিছুই দেখছেন না। পুলিশের পাঁচটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার পরেও বোমা পড়ছে।’’ পুলিশকে উদ্দেশ করে অর্জুনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি জেড প্লাস নিরাপত্তা পাই। নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি চালালে তখন কী হবে।’’
ভিড়ের মধ্যে মধ্যে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে কটূক্তি ভেসে আসে। বিজেপির লোকজন পুলিশকে বলতে থাকেন, ১০ দিন ধরে জগদ্দল থানার পুলিশকে বলা সত্ত্বেও এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। বিজেপির তরফে কয়েকজনের নাম করে পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগও দায়ের করা হয়।
রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে জগদ্দলের তৃণমূল প্রার্থী সোমনাথ শ্যাম দাবি করেন, তৃণমূলের কারও সঙ্গে কোনও শত্রুতা নেই। পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে বলেই বুধবার রাতে জানান সোমনাথ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের এক এসিপিকে নিগ্রহ করা হয়। এ দিন সকালে সেখানে গিয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, তৃণমূল এবং বিজেপি— দু’দলেরই কিছু দুষ্কৃতী বোমা ছুড়েছে। পাঁচ-ছ`টি জায়গায় বোমা পড়েছে। ছ`টি জায়গায় বোমার দাগ আছে। দু’দলের মধ্যে শত্রুতার জেরেই ওই ঘটনা।’’
বোমার স্প্লিন্টারে জখম হয়েছে অমিত তিওয়ারি। তার মা মঞ্জু বলেন, ‘‘এখানে অনেক রাত পর্যন্ত বাসিন্দারা, বাচ্চারা বাইরে থাকে। বুধবার রাতে হঠাৎ করেই শুনতে পাই, বোমা পড়ছে বলে লোকজন চিৎকার করছে। তাড়াতাড়ি বাচ্চাদের নিয়ে ঘরে ঢুকে যেতে চেষ্টা করি। তা-ও আমার ছেলের পায়ে আঘাত লাগে।’’ মঞ্জুদেবীর ঘরের দরজায় একটি বোমা পড়েছিল।
বুধবার রাতে পায়ে আঘাত পাওয়া এক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে বলছিল, খেলা হবে, খেলা হবে।’’