প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের প্রথম দফার ভোটেই বিক্ষিপ্ত ভাবে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। তাই পরবর্তী দফাগুলিতে ভোটের দিন কিংবা তার আগে সন্ত্রাস ঠেকাতে তৎপর হচ্ছে প্রশাসন। এ নিয়ে তৎপরতা বেড়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটেরও। সূত্রের খবর, সন্ত্রাস মোকাবিলায় অস্ত্র আইনে ধৃতদের ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করার সময়ে আদালতের কাছে পুলিশ আবেদন করছে, যাতে ভোটের আগে ওই সব ধৃতকে জামিন দেওয়া না হয়। সেই সঙ্গে আগে ভোটে গোলমাল পাকানোর রেকর্ড রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের থেকে মুচলেকাও লেখানো হচ্ছে যে, এ বার ভোটে তারা কোনও রকম গোলমাল করবে না। সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীদের উপরে নজরদারিও চালানো হচ্ছে বলেই কমিশনারেট সূত্রের খবর।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অধীনে ১২টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকা রয়েছে। দিনকয়েক আগে জগদ্দলের মেঘনা মোড়ে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বাড়ির সামনে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। ২০১৯ সালে ভাটপাড়া বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের সময়েও বোমাবাজি এবং ইটবৃষ্টি হয়েছিল। জখম হয়েছিলেন ব্যারাকপুরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। গত মঙ্গলবার সেই ঘটনা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশকে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, অতীতে গোলমাল করার জন্য মামলা দায়ের হওয়া লোকজনের তালিকা ইতিমধ্যেই পুলিশের থেকে চাওয়া হয়েছে। গোলমালকারীদের হিসেব পুলিশের থেকে কার্যত বুঝে নিচ্ছেন কমিশনের আধিকারিকেরা। পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভোটে গোলমাল করার রেকর্ড রয়েছে কিংবা মামলা রয়েছে, এমন ৭০০ জনকে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৭ ধারা মেনে তাদের থেকে ৫০০ টাকার বন্ড নেওয়া হয়েছে। ভোটের সময়ে তারা গোলমাল পাকাবে না— এই মর্মে তাদের থেকে মুচলেকা আদায় করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, নির্দিষ্ট কোনও অপরাধের অভিযোগ না থাকলে যে হেতু কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব নয়, তাই অতীতে ভোটের সময়ে গোলমাল পাকানো লোকজনের থেকেই এই মুচলেকা আদায় করা হচ্ছে। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘গোলমাল যারা করেছে, তারা তো চিহ্নিত হয়েই রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মীরাও তো যে কোনও সময়ে যে কোনও গোলমালে জড়িয়ে পড়তে পারেন। নেতা-কর্মীদের থেকেই তো সাধারণ স্তরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। তাই অশান্তি এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। তার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।’’
এ ছাড়া, ওই সব এলাকায় বেশ কিছু ঘাট ব্যবহার করে দুষ্কৃতীরা গঙ্গার উল্টো পাড়ে হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে যাতায়াত করে। তাই যে কোনও অপরাধ করেই গঙ্গা পেরিয়ে হুগলির দিকে চলে যেতে পারে দুষ্কৃতীরা। তাই ভোটে অশান্তি এড়াতে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অধীনে ১২টি বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন ঘাটেও নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও মামলা হয়েছে অথচ হদিস পাওয়া যায়নি, এমন বহু দুষ্কৃতীর নামও কমিশনের নির্দেশমতো ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকেরা।