স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শম্পাদেবী। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের ভিতরে প্রচার করার সময়ে তাঁর উপরে ‘বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা’ হামলা চালিয়েছে বলে মাধবডিহি থানায় অভিযোগ করলেন রায়নার তৃণমূল প্রার্থী তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভানেত্রী শম্পা ধাড়া। শনিবার দুপুরে রায়নার বড়বৈনান পঞ্চায়েতের দেনো গ্রামে এই গোলমাল বাধে। শম্পাদেবী হাতে চোট পেয়েছেন বলে অভিযোগ। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূল বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে গ্রাম ঘেরাও করে, তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ জানায়, গোলমালের অভিযোগ পেয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন রায়না ২ ব্লকের বেশ কয়েকটি বুথে তৃণমূল প্রার্থী শম্পা ধাড়ার প্রচার-কর্মসূচি ছিল। এই এলাকাতেই রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনসারি আলি খান-সহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ দেনো পূর্বপাড়া ধরে মিছিলটি যাওয়ার সময়ে অশান্তির সূত্রপাত। বিজেপির দাবি, মিছিল যাওয়ার সময়ে শ্মশানযাত্রীদের বিশ্রামের ঘরে বসে থাকা জনা চারেক যুবক ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেন। তখন মিছিলের পিছনে থাকা একটি ট্রাক্টর থেকে তৃণমূলের লোকজন ইট ছোড়ে বলে অভিযোগ। তাতে এক বালক আহত হয়। বিজেপির আরও দাবি, পাড়ার বাসিন্দারা এর প্রতিবাদ জানালে, তৃণমূলের লোকজন তাঁদের উপরে চড়াও হয়।
তৃণমূলের পাল্টা দাবি, তাদের কর্মীরা পাল্টা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছিলেন। তা নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হতেই বিজেপি কার্যালয় থেকে কর্মী-সমর্থকরা বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা চালায়। প্রার্থীকেও ঘিরে ধরা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল প্রার্থী শম্পাদেবীর অভিযোগ, ‘‘কিছু বোঝার আগেই পরপর কয়েকটা তির উড়ে আসে। আমার পাশেই ছিলেন রায়না পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ কলিমুদ্দিন। দু’জনেই অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। আমাদের অল্পবিস্তর লেগেছে।’’ তৃণমূলের দাবি, বিজেপির ‘হামলা’য় তাদের চার কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর এক জন স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন।
ওই ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি অসীম পালের অভিযোগ, “পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করছি। তা না হলে, বচসার কয়েক মিনিটের মধ্যে বোমা, তরোয়াল, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা হল কী ভাবে? পরে কয়েকটি তিরও ছোড়া হয়।’’ হামলার অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির রায়না বিধানসভার আহ্বায়ক কৃশানু রায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূল বহিরাগতদের দিয়ে গ্রাম ঘিরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল।’’ এলাকার বিজেপির যুব মোর্চার নেতা সৌমেন কোলের দাবি, ‘‘বাড়িতে ঢুকে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এক বালকও জখম হয়েছে। পায়ের তলায় মাটি সরে যাচ্ছে বলেই তৃণমূল আক্রমণের রাস্তা নিয়েছে।’’
ঘটনার খবর পেয়ে হিজলনা-সহ বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল কর্মীরা ঘটনাস্থলে জমায়েত করেছিলেন, এ কথা মেনে নিয়ে শম্পাদেবীর নির্বাচনী এজেন্ট বামদাস মণ্ডলের দাবি, ‘‘প্রার্থী আক্রান্ত হচ্ছেন শুনে স্বাভাবিক ভাবেই দলের কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হয়েছিলেন। পুলিশের কথামতো আমরা এলাকায় শান্তি বজায় রেখেছি।’’