তিন প্রার্থী: রমেন্দু সিংহরায়, স্বপন দাশগুপ্ত, সুরজিৎ ঘোষ
“গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই, তা বলব না। তবে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করছি।”— কেন্দ্র তারকেশ্বর, ভোটের এক সপ্তাহ আগে বলছেন বিজেপি প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্ত।
তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়ার প্রার্থী দিলীপ যাদবের মূল্যায়ন, “স্বপনবাবু ‘হাই-প্রোফাইল’ প্রার্থী। তারকেশ্বরের মতো গ্রামীণ কেন্দ্রে তাঁকে মানায়?” আর স্বপনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি তো এই কেন্দ্রে এখনও পরীক্ষিতই নই। মানুষ আমাকে গ্রহণ করবেন কি না, তা সময়ই বলবে।”
সঙ্ঘ পরিবারের অনুশীলন থেকে সরাসরি উঠে না এলেও, বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী মুখের দৌড়ে স্বপনবাবুর নাম বারে বারে উঠে এসেছে। নির্দল প্রার্থী হিসেবে রাজ্য সভায় তাঁকে সমর্থন দিয়েছিল বিজেপি। রাজ্যসভার প্রার্থীপদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি তারকেশ্বর কেন্দ্র থেকে বিজেপি’র টিকিটে ভোটে লড়বেন। তিনি বিজেপি’র বিশিষ্টজনেদের মধ্যে অত্যন্ত পরিচিত নাম। বিলেতেই মাস্টার্স এবং পিএইচডি, পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি নিয়ে। সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে তাঁর নাম বহুচর্চিত।
তারকেশ্বর কেন্দ্রে তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছেন তৃণমূলপ্রার্থী রমেন্দু সিংহ রায় এবং সিপিএম জোট-প্রার্থী সুরজিৎ ঘোষ। ধারে-ভারে এগিয়ে থাকলেও স্বপনবাবুকে এ বার ‘মেঠো’ রাজনীতিতে লড়াই করতে হবে। গত বিধানসভা ভোটের ফলাফলে তারকেশ্বর কেন্দ্রটি তৃণমূলের নিরাপদ আসন। গত বিধানসভায় এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের রচপাল সিংহ ২৭ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে অবশ্য এই কেন্দ্রে অনেকটাই শক্তি বাড়িয়েছে বিজেপি। ওই ভোটে তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ছিল ৪৩৪৫টি।
এই পরিসংখ্যান ধরে ভোটের অঙ্ক কষা শুরু করেছে বিজেপি। স্বপনবাবুর বক্তব্য, “দেখতে হবে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে কি না। বাস্তব, হল দলের শক্তি এবং সংগঠন, দু’য়েরই বৃদ্ধি চোখে পড়ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলে থাকেন, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের চরিত্র পুরোপুরি আলাদা। ফলে যে মানসিকতা থেকে লোকসভায় মানুষ ভোট দিয়েছেন, বিধানসভায় তা এক না-ও থাকতে পারে। বিজেপি’ও এই ভোটে স্থানীয় সমস্যার উপরেই গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোটারদের মনোভাবও মিশ্র। অনেকে যেমন সরকারের কাজে খুশি, তেমনই স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের উপর অনেকেই বিরক্ত। মানুষের ক্ষোভকেই হাতিয়ার করছে বিজেপি। স্বপনবাবু বলেন, “কোনও আসনকেই নিরাপদ বলা যায় না। তবে এই কেন্দ্রকে নিরাপদ নয় বলে মনে হচ্ছে না। মানুষকে একটাই কথা বলছি, আমরা সরকারে এলে দুর্নীতিমুক্ত পরিষেবা নিশ্চিত করব।”
তৃণমূল প্রার্থী রমেন্দু সিংহ রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা দিয়ে রাজনীতি হয় না, মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়। মানুষের দুয়ারে ৬৪টি প্রকল্প পৌঁছে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি তাঁর সৈনিক।’’
‘হাই-প্রোফাইল’ বনাম মেঠো রাজনীতি—জয়ীর শংসাপত্র কে নেবেন? দুপুর রোদে পুকুরধারে তাল গাছের তলায় বসে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধের মন্তব্য, “খেলা জমে গিয়েছে।