বোলপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুধবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
নজিরবিহীন নিরাপত্তায় মুড়ে আজ, বৃহস্পতিবার ভোটে যাচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূম। যিনি নিজেও নির্বাচন কমিশনের ‘নজরবন্দি’। বৃহস্পতিবার জেলা জুড়ে ১১টি বিধানসভা এলাকায় মোতায়েন থাকবেন প্রায় ২১ হাজার আধা সেনার জওয়ান! এত বাহিনী এর আগে কখনও জেলায় আসেনি বলেই জানাচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ। ২৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে থাকছেন প্রায় সাত হাজার রাজ্য পুলিশের কর্মীও। অতি স্পর্শকাতর বুথগুলির দিকে বিশেষ নজর থাকবে। তার পরেও বুধবার ভিন্ জেলা থেকে ৬ পুলিশ কর্তাকে নিয়ে আসা হয়েছে বীরভূমে কমিশনের নির্দেশে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা তো থাকছেনই। সঙ্গে থাকছে কুইক রেসপন্স টিম, ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা, মাইক্রো অবজার্ভার থেকে ভিডিয়োগ্রাফি। ভোটপর্ব সুষ্ঠুভাবে মেটাতে একগুচ্ছ ব্যবস্থার সঙ্গে থাকছে কোভিড বিধি পালনে সতর্কতাও। বীরভূমের জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বুধবার জানান, নির্বিঘ্নে ভোটপর্ব মেটাতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে যা যা ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল, সবটাই করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২৭ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৯৯। এ বার মোট ৩০২১টি স্থায়ী এবং ৮৮৭টি ‘অগ্জ়িলিয়ারি’ বুথ মিলিয়ে মোট ৩৯০৮টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। তার মধ্যে ‘অতি স্পর্শকাতর’ বুথের সংখ্যাই ১১৭৫!
বস্তুত, বীরভূমের রাজনৈতিক হিংসার দীর্ঘ ইতিহাসই এত সংখ্যক বুথকে ‘অতি স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রেও জানা গিয়েছে, ওই বুথগুলিতে হয় অতীতে ঝামেলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে বাধা দানের অভিযোগ উঠেছে কিংবা অস্বাভাবিক হারে ভোট পড়েছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে। তাই শুধু প্রচুর সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী বা ছয় পুলিশ কর্তাকে ভোট পরিচালনায় সহযোগিতার জন্য নিয়ে আসা নয়, শেষ বেলায় এসে পুলিশ সুপার বদলে দেওয়ার মধ্যেও কোথাও সেই ইঙ্গিত।
জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘মানুষ যাতে নির্ভয়ে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুষ্কৃতীদের আটকাতেও সমান তৎপরতা রয়েছে।’’ কোনও ভোটারকে ভোট দানে কেউ বাধা সৃষ্টি করছে খবর পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস পুলিশ সুপারের।
সূত্রের খবর, জেলায় ২০৫৭টি বুথ থেকে ওয়েব কাস্টিং হবে। কমিশন সরাসরি এই বুথগুলির ভোটপর্ব পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। ১৫৬১টি বুথে থাকছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। ২৭৯টি বুথে থাকবেন মাইক্রো অবজার্ভার। কুইক রেসপন্স টিম থাকছে ২১৯টি বুথে।
এ বার মহিলা পরিচালিত বুথের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। মোট ৪৬০টি মহিলা পরিচালিত বুথ থাকছে। মোট ভোটকর্মীর সংখ্যা ১৭ হাজার ২৬৯। তাঁদের মধ্যে মহিলা কর্মী ২১৪০ জন। পুরো ভোট প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য জেলায় রয়েছেন ৮ জন সাধারণ পর্যবেক্ষক ও ৩ জন পুলিশ পর্যবেক্ষেক। বুধবার সিউড়ি, বোলপুর ও রামপুহাট মিলিয়ে জেলার তিনটি ডিসিআরসি থেকে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটকর্মী ও জওয়ানেরা। ভোটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে টহল শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।