প্রতীকী ছবি।
জুন পার হতেই পরিযায়ী পাখির দল ভিড় করবে জাতীয় সড়ক লাগোয়া পক্ষীনিবাসে। জাতীয় সড়ক ঘেষে থাকা রায়গঞ্জের কুলিক পাক্ষীকুঞ্জের পরিচিতি আদালা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। গাছের মাথায় মাথায় সংসার পাতবে ওপেন বিল স্টক, লিটল এগ্রেট, নাইট হেরনের দল। বৃষ্টিস্নাত কুলিকে পাখির মেলা দেখতে ভিড় করবেন নানা জায়গার বাসিন্দা।
এখন তার পাশ দিয়ে ভোট প্রচারে ব্যস্ত নেতারা। পতাকা নিয়ে মিছিল, গাড়ি, মোটরবাইকের যাতায়াত চলছেই। রায়গঞ্জ শহর থেকে সরাসরি দিল্লি, কলকাতার যাওয়ার পর্যাপ্ত ট্রেন, রায়গঞ্জ থেকে বারসই জংশন স্টেশনে সড়ক পথে যাওয়ার রাস্তা, তুলাইপাঞ্জি চালের রফতানির সুব্যবস্থা, কুলিককে দেশের পর্যটন মনচিত্রে তুলে ধরার দাবি দীর্ঘদিনের। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্বপ্নের এমস-ও হয়নি রায়গঞ্জে। ভোট এলেই ঘুরে ফিরে সেই এমসের কথা আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। এবারও অন্যথা হয়নি।
ভরদুপুরে কমলাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মিরুয়ালে প্রচারের সময় এক বৃদ্ধা বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীর কাছে গিয়ে চেন্নাইতে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। টাকার অভাবে তিনি যেতে পারছেন না। বিজেপি প্রার্থী বলেন, “রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এবং রায়গঞ্জ থেকে জিতলে এখানে এমসের ধাঁচে হাসপাতাল করতে সচেষ্ট হব।” অমিত শাহও উত্তরবঙ্গে, উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ কেন্দ্রেও প্রচারে এসে নানা জায়গায় এমসের ধাঁচে হাসপাতালের কথা বলছেন।
পাল্টা মোহিত সেনগুপ্তের প্রচারে রায়গঞ্জে এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি নেতাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে পাড়ায় পাড়ায় এমস হবে। প্রিয়রঞ্জনের নাম হবে দেখে মোদী-দিদি ষড়যন্ত্র করে রায়গঞ্জ থেকে ওই হাসপাতাল সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। মোহিতের দাবি, বাম আমলে ওই হাসপাতালের জন্য রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ শুরু হলেও তৃণমূল এসে আটকে দেয়। রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের কথায়, “বাসিন্দারা টের পেয়েছে এমসের কথা বলে ভাঁওতা দেওয়া হয়।” কানাইয়ালালের বিরুদ্ধে বহিরাগত ইস্যু রয়েছে। ২০১৬ তে ইসলামপুর থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যোগ দেন।
হেমতাবাদ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী মৃত দেবেন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী চাঁদিমা রায়। লোকসভার পর বালিয়ামোড় বাজারে তাঁর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। এখনও সেই ঘটনার কিনারা হয়নি। বাসিন্দাদের সহানূভূতি হাওয়া রয়েছে চাঁদিমার দিকে। চাঁদিমাও প্রচারে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘স্বামী মানুষের শুধু উপকার করতেন। তার অসমাপ্ত কাজ তিনি করতে চান।’’ তার মধ্যে কলেজ, গ্রামীণ হাসপাতাল তৈরির বার্তাও থাকছে। রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সত্যজিৎ বর্মনকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার নতুন কিসানমান্ডি, বাসস্ট্যান্ড করেছে, হাসপাতালের উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ আমাদের সঙ্গে।’’ সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ভূপেন বর্মনের দাবি, মানুষ তৃণমূল-বিজেপির বিকল্প চাইছে। তাই তারাই এগিয়ে।
পঞ্চায়েত ভোট থেকেই কালিয়াগঞ্জ বিজেপি প্রভাব বাড়িয়েছে। কালিয়াগঞ্জে বিজেপি বিপাকে পরে বহিরাগত ইস্যু ঘিরে। ফালাকাটার বাসিন্দা প্রার্থী সৌমেন রায়কে ঘিরে বিক্ষোভ, প্রচারে যেতে গেলে তাঁর দলবলের উপর চড়াও হওয়া, গাড়ি ভাঙচুর, নেতৃত্বের ইস্তফা, অনশন কিছুই বাদ যায়নি। সৌমেন বলেন, ‘‘ক্ষোভ বিক্ষোভ মিটেছে। সবাই প্রচার করছেন। জয় নিশ্চিত।’’ এই কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে ৫৬ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তবে কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায়ের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে উপনির্বাচন হয়। তাতে ২৪০০ কিছু বেশি ভোটে জেতে তৃণমূলের তপন দেব সিংহ। তাঁকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তিনি বলেন, ‘‘মানুষকে পাশে পেয়েছি, এবারও পাব।’’
কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে নেমেছেন প্রিয় জায়া দীপা দাশমুন্সি। তাতে উজ্জীবিত কংগ্রেস। কালিয়াগঞ্জে তাদের প্রার্থী প্রভাস সরকার। কিছু দিন আগে তৃণমূল থেকে এসেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘প্রচারে সাড়া মিলছে। মানুষ পাশেই কয়েছেন।’’