Narendra Modi

Bengal polls: ‘চলছে যা জুয়াচুরি, নাহি তার তুলনা’

সোমবার কল্যাণীর সভায় ‘লোকপ্রিয় কবি’ সুকুমার রায়ের কবিতা উদ্ধৃত করেছেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৫৩
Share:

ফাইল চিত্র।

‘মোদীয় ঢঙে’ রবীন্দ্রনাথ পড়ে শুরু করেছিলেন। সুভাষচন্দ্রের লেখাও এক প্রস্থ তাঁর ‘নিজস্ব বাংলা’য় স্বকর্ণে শুনে ফেলেছে বাঙালি। এ বার সুকুমার রায়েরও পালা এল।

Advertisement

সোমবার কল্যাণীর সভায় ‘লোকপ্রিয় কবি’ সুকুমার রায়ের কবিতা উদ্ধৃত করেছেন নরেন্দ্র মোদী। মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চক্র ইত্যাদিতে মদত দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মোদীর মুখে সুকুমারের ‘চোর ধরা’র লাইন! তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে উচ্চারণে জোর দিয়ে দিয়ে কয়েকটি শব্দ দু’বার করে আওড়ে মোদী বলেছেন, “চোলছে যা জুয়াচুরি নাহি তার তুলনা!” গত লোকসভা ভোটে তিনি নিজেকে এ দেশের চৌকিদার বলে দাবি করেছেন। সুকুমারের এই কবিতাটিতে আবার প্রকাণ্ড ঢাল তলোয়ার হাতে এক দাড়িওয়ালা প্রহরীর ছবি। যাঁর পিছনে কাক, বেড়ালে কাটলে, লুচি, জিবেগজা, মণ্ডা সাফ করে দিচ্ছে! বোঝাই যাচ্ছে, সুকুমারে অভ্যস্ত পাঠক এমন কবিতার কী মানে করবে, তা নিয়ে এ ক্ষেত্রে মাথা ঘামানো হয়নি! “বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর থিঙ্কট্যাঙ্কের কোনও বাঙালির সাহায্য নিয়ে এই ভাবে নিরন্তর বাঙালি সাজার চেষ্টা মোদী চালাচ্ছেন! শুধু দেখে দেখে জনপ্রিয় বাংলা কবিতা গান তাঁর নিজস্ব উচ্চারণে বলে যাওয়াটাকে ভণ্ডামিই বলব,” বলছেন ইতিহাসবিদ সুগত বসু। তাঁর কথায়, “গাঁধী থেকে শুরু করে ভারতের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই বাংলা,
বাঙালির সংস্কৃতির অনুরাগী ছিলেন। কিন্তু পর পর রাজনৈতিক বক্তৃতায় এমন ভঙ্গি কারও দেখা যায়নি।” আর অর্থনীতির প্রবীণ অধ্যাপক সৌরীন ভট্টাচার্য বলছেন, “মমতার ভোটকুশলীদের নিয়ে অনেক কথা জানা যায়। মোদীরও নিজস্ব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি জোরদার কাজ করছে, তা ওঁর বক্তৃতায় বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি থেকে এত ইনপুটেই পরিষ্কার।” তবে সুকুমারের লাইন তুলে ধরে চমক দিলেও একই সভায় মোদীকে বক্তৃতায় আহ্বান পর্বেও তাঁর সঙ্গে স্বয়ং বিবেকানন্দের তুলনা করা হয়েছে। তাঁকে কার্যত ‘দ্বিতীয় নরেন্দ্র’ বলে প্রতিষ্ঠা দিতে বাংলায় বলা হয়, বিশ্বনেতা বিবেকানন্দের পরে তিনিই ভারতবর্ষকে বিশ্বের দরবারে নতুন করে চিনিয়েছেন। এবং বলতে ওঠে কল্যাণীর মাটির মান বাড়ানো প্রতিভাধরদের কথা প্রসঙ্গে তিনি পর পর তুলে ধরেছেন মঙ্গল পান্ডে, বঙ্কিমচন্দ্র, রানি রাসমণি, রামপ্রসাদ প্রমুখ চিরস্মরণীয়দের কথা। তাতে অনেকেই তাজ্জব, এঁদের সঙ্গে কল্যাণীর আদৌ যোগটা কোথায়? তাঁরা কাছাকাছি এলাকায় ব্যারাকপুর, নৈহাটি বা হালিশহরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও কারওরই বিশেষ কল্যাণী-যোগ জানা যায় না। তবে ‘বিভূতিভূষণ চট্টোপাধ্যায়’ নামটিও মোদী উল্লেখ করেন (সম্ভবত বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে চেয়েছিলেন)। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন কল্যাণীতে থেকেছিলেন। এখন প্রশ্ন, বাংলার ইতিহাস ভূগোল এ ভাবে গুলিয়ে ফেলেও কি সত্যিই নিজেকে বাংলা-বাঙালি অনুরাগী বলে তিনি প্রমাণ করতে পারবেন?

সে পরে বোঝা যাবে! কিন্তু তাঁর বাংলা উচ্চারণ নিয়ে পর পর মিম, চুটকি ছড়ালেও গভীর বাংলা-যোগ প্রমাণে মোদী এখন অকুতোভয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement