ভোটার তালিকায় কেটে দেওয়া হয়েছে শৈলেনবাবুর নাম। নিজস্ব চিত্র।
ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। সেই তালিকা অনুযায়ী তিনি মৃত। অথচ, তাঁর ভোটের প্রশিক্ষণের ডাক এসেছে। ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছেন দু’টি প্রশিক্ষণও। বাকি আছে একটি। আগামী ২৬ এপ্রিল তাঁকে একটি বুথে ভোটের কাজও করতে হবে। টালিগঞ্জের চারু মার্কেট এলাকার বাসিন্দা শৈলেনচন্দ্র ঘোষের অভিযোগ, ভোটার তালিকায় নাম নেই তাঁর। তিনি মৃত ব্যক্তি। অথচ, ভোটের কাজের জন্য তাঁর ডিউটি পড়েছে। সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ভোটের কাজ তো তিনি করবেন, কিন্তু নিজে ভোটটা দিতে পারবেন না।
বছর ৫৯-এর শৈলেনবাবু জানান, তিনি হরিণঘাটা ডেয়ারিতে চাকরি করেন। সরকারি কর্মী হিসেবে এ বারও তাঁর ভোটের দিন ডিউটি পড়েছে। এ বছর ডিউটি করতে হবে বন্দর এলাকার একটি বুথে। আগামী ২৬ তারিখ সেখানে ভোট। শৈলেনবাবু জানান, ভোটের ডিউটি করার জন্য তাঁর কাছে নির্বাচন কমিশনের দফতর থেকে চিঠি এসেছে। সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনেই ভোটার তালিকায় নিজের নাম দেখতে গিয়ে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! শৈলেনবাবু বললেন, “ভোটার তালিকায় আমার নামের পাশে ‘ডিলিটেড’ শব্দটি লেখা আছে। আমার নামের ক্রমিক সংখ্যার আগে ইংরেজিতে ‘ই’ লেখা রয়েছে। ওই ‘ই’-এর অর্থ হল ‘এক্সপায়ার্ড’ বা মৃত ব্যক্তি। এ সব দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। আমি দিব্যি বেঁচে আছি, অথচ ভোটার তালিকায় মৃত হয়ে গেলাম কী করে?”
শৈলেনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘আমি যদি ভোটার তালিকায় মৃতই হই, তা হলে ভোটের ডিউটির জন্য বাড়িতে চিঠি আসে কোন যুক্তিতে?’’ তিনি জানিয়েছেন, ২৬ তারিখ তাঁকে বন্দর এলাকার ভোটকেন্দ্রে সেকেন্ড পোলিং অফিসার হিসেবে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যেই দুই দফায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেলেছেন তিনি। শৈলেনবাবু বলেন, “আমি দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। আমার ভোটের ডিউটি পড়েছে দক্ষিণ কলকাতারই বন্দর এলাকায়। তাই ব্যালটে নয়, যে ভোটকেন্দ্রে ডিউটি পড়েছে, সেখানেই ভোট দিতে পারতাম। কিন্তু ভোটার তালিকা অনুযায়ী ‘মৃত’ ভোটার তো আর ভোট দিতে পারেন না। তাই আমারও ভোট দেওয়া হবে না।’’ শৈলেনবাবু জানান, তিনি যদি এমন কোনও ভোটারকে দেখেন, যাঁর নাম মৃতের তালিকায় আছে, তিনিও তো তাঁকে ভোট দিতে দেবেন না।
শৈলেনবাবু জানান, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। কমিশনের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, কোথাও একটা তথ্যগত ভুল হয়েছে। এটা ঠিক করে নেওয়া হবে। শৈলেনবাবু বলেন, “নির্বাচন দফতরের এক আধিকারিক আমাকে জানিয়েছেন, আমি যে অভিযোগ করেছি, সেই নথি দেখিয়ে ভোটের দিন ভোট দিতে পারব। কিন্তু আমি প্রতিবাদ স্বরূপ ভোট দেব না। আমি সাধারণ ভোটারের হাতে কালি লাগানো থেকে শুরু করে ভোটের যাবতীয় কাজ করত পারব। কিন্তু ভোটার তালিকায় ভুল তথ্যের জন্য নিজের ভোট দানের অধিকার হারালাম।”