মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল এবং কর্মাধ্যক্ষ সরলা মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল সদস্যদের দলবদলের জেরে ক্ষমতার পালাবদল ঘটতে চলেছে মালদহ জেলা পরিষদে। সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল-সহ ১৫ জন সোমবার কলকাতায় বিজেপি-তে যোগদান করায় জেলা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে তৃণমূল। ফলে ক্ষমতা জোড়াফুল থেকে পদ্মফুলে হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
১৫ সদস্যের যোগদানের ফলে ৩৮ আসন বিশিষ্ট মালদহ জেলা পরিষদে বিজেপি-র সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ২০। তৃণমূলের ১৬। এ ছাড়া রয়েছেন কংগ্রেসের ২ জন সদস্য। জেলার একটি রাজনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, ক্ষমতা দখলের জন্য ভোটাভুটি হলে কংগ্রেসের দুই জেলা পরিষদ সদস্যও ‘তৃণমূল বিরোধী’ অবস্থান নেবেন। ওই সূত্রের দাবি, দলবদলকারীরা সকলেই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ। তাঁরা জেলা তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন কো-অর্ডিনেটর অম্লান ভাদুড়িরও ঘনিষ্ঠ। সোমবার অম্লানও যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে মালদহ জেলা পরিষদে তৃণমূলের ৩০, বিজেপি-র ২ এবং কংগ্রেসের ২ জন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে বিজেপি-র উজ্জ্বল চৌধুরী পরে তৃণমূলে যোগ দেন। এর ফলে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩১। বিজেপি-র কমে হয় ৫। বিধানসভা ভোটে উজ্জ্বলকে মালদহ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীও করেছে তৃণমূল। সোমবার বিজেপি-র ‘পাল্টা চালে’ বদলে গিয়েছে সমীকরণ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সভাধিপতি গৌরচন্দ্রের পাশাপাশি বিজেপি-তে যোগদানকারী জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন সভাধিপতি তথা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সরলা মুর্মু। শুক্রবার হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে সরলার নাম ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু ৩ দিনের মাথাতেই সরলার ‘গতিবিধি’ আঁচ করে হবিপুরের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে প্রদীপ বাস্কের নাম ঘোষণা করা হয়। অবশ্য, তখনও সরলা আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্ম শিবিরে সামিল হননি। তাঁকে সরানোর জন্য ‘শারীরিক অসুস্থতা’র কারণ দেখানো হয় তৃণমূলের তরফে।
জনজাতি গোষ্ঠীর নেত্রী সরলা সোমবার টেলিফোনে জানান, তিনি গত ১ বছর ধরে মালদহ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করার কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মালদহের জন্য তৃণমূলের জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছিলাম।১ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কাজ করছি দলের হয়ে। কিন্তু দল প্রার্থী করল হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে। তাই দল পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম।’’ তবে জেলা পরিষদের দলত্যাগী সভাধিপতি গৌরচন্দ্রের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন,‘‘শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে এই সদস্যরা তৃণমূলে এসেছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে জিতে জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন। তাই দল বদলালেন। তবে ওঁরা দল ছাড়লেও জেলা পরিষদ তৃণমূলের হাতছাড়া হচ্ছে না।’’ তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলা পরিষদের সহ-সভাপধিপতি চন্দনা সরকারকে সামনে রেখে বিজেপি-র মোকাবিলা করতে চাইছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। বিধানসভা ভোটে চন্দনাকে বৈষ্ণবনগর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে।