আহত সমর্থককে দেখতে ঘাটাল হাসপাতালে বাম প্রার্থী কমল দোলুই।—নিজস্ব চিত্র।
ভোট চলাকালীন অশান্তি শুরু হয়েছিল। আর ভোট মিটতেই একেবারে হামলা। কেশপুর, দাঁতন, মোহনপুর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সিপিএম, কংগ্রেস কর্মীদের উপর হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল।
ফতোয়া উপেক্ষা করে ভোট দেওয়ার অপরাধে সাত জন সিপিএম কর্মী-সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের লোকেদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি কেশপুরের শীর্ষার বিনাগেড়িয়ার। সিপিএমের কেশপুর জোনাল সম্পাদক মানিক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা সাত জনকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। ৫ জন পালিয়ে আসতে পারলেও এখনও দু’জন নিখোঁজ। পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।’’ তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। ব্যক্তিগত কোনও গোলমাল ঘটে থাকতে পারে।’’
সোমবার রাতে মোহনপুরের রামপুরায় সিপিএমের জোনাল সদস্য মধুসূদন মাইতির ভাইয়ের বাড়ির চালা ভেঙে দেওয়া হয়। শেখ ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর হয়। তাঁর বাড়িতেই ক্যাম্প অফিস করেছিল সিপিএম। সেখান দলীয় কর্মীরা ওই বুথে ছাপ্পা দিতে পারেনি তৃণমূল। তাতেই রাগ। হুমকি দেওয়া হয় মহিলাদেরও। গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়।
দাঁতন-২ ব্লকের গামারিপুর বুথে সিপিআই প্রার্থীর এজেন্ট সিপিএম কর্মী শঙ্কু রথকে এ দিন সকালে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। জখম শঙ্কুবাবু এগরা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। কুসুমদা গ্রামের বাম কর্মী আশিস মালকেও মারধর করা হয়েছে। তিনি দাঁতন-২ ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাম প্রার্থীর হয়ে পোলিং এজেন্ট থাকার ‘অপরাধে’ গণআদালতে হাজির থাকার ফরমান জারির অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ, তুরকা গ্রামের তিন সিপিএম কর্মী আবেগ বক্স, মুজিবর খাঁ ও ফরিদ রায়কে ওই ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল। সিপিএমের দাঁতন-২ জোনাল সম্পাদক রতন দে বলেন, “ওই বুথগুলিতে আমরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা রেখেছিলাম। ফলে তৃণমূল ছাপ্পা মারতে পারেনি। সেই আক্রোশেই এই ফরমান।’’ বিষয়টি তাঁরা জানিয়েছেন থানায়। তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম প্রধান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “তৃণমূল কোনও ঘটনায় যুক্ত নয়। মাওবাদীদের কায়দায় অতীতে গণআদালত বসাত সিপিএমই।” তৃণমূলেরও পাল্টা অভিযোগ, দামোদরপুর গ্রামে তাঁদের সমর্থক লক্ষ্মী সিংকে ভোটের পরে মারধর করেছে সিপিএম সমর্থকরা।
দাঁতন-১ ব্লকের মনোহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দোয়াস্তি গ্রামে সোমবার রাতে সাত জন আদিবাসী পুরুষ মহিলাকে মারধর করার ঘটনায় অভিযোগ সেই তৃণমূলেরই বিরুদ্ধে। দাঁতন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি মালতী কিস্কু, খাঁদি হাঁসদা, সরুবালি মাণ্ডিদের মাণ্ডিদের অভিযোগ তাঁরা কেশিয়াড়ির সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দেওয়ায় তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায়। তৃণমূলের সতেরো জনের বিরুদ্ধে অভিযোগকরা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে জেনকাপুর ও রংশাটিয়া গ্রামে সিপিএম ও তৃণমূলের সংঘর্ষে মোট চারজন আহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। সিপিএমের দাঁতন ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক রতন দের অভিযোগ, ‘‘দলের তুরকা লোকাল কমিটির সদস্য অনন্ত রাজ ও তাঁর পরিবারের দুই সদস্যকে রংশাটিয়ার বাড়িতে এসে মারধর করে তৃণমূলের লোকেরা।’’
তিনি বলেন, “এ দিন বিকেলে আহত তিন জনকে নিয়ে মোহনপুর হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দেয় তৃণমূলের লোকেরা।” পরে দাঁতন থানার পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে খণ্ডরুই গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অনন্তবাবু সিপিএমের পোলিং এজেন্ট ছিলেন। অন্য দিকে তৃণমূল নেতা প্রদীপ পাত্রের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএমের লোকেরাই আগে জেনকাপুরে গিয়ে তৃণমূলের নেতা শেখ দাইয়ানের মাথা ফাটিয়ে দেয়। তার প্রতিবাদ জানাতে ওই গ্রামের মানুষ রংশাটিয়ায় এসে ছিলেন। তবে ধস্তাধস্তির বেশি কিছু হয়নি।’’
ঘাটাল মহকুমা জুড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমনই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলল সিপিএম। ঘটনায় সাত জন সিপিএম সমর্থক আহত হয়ে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি। সিপিএমের অভিযোগ, সোমবার থেকেই ঘাটালের গঙ্গাপ্রসাদ, শিমুলিয়া, দাসপুরের উদয়চক, রাজনগর এবং চন্দ্রকোনার কৃষ্ণপুর, কল্লা সহ দশ-বারটি এলাকায় তৃণমূলের লোকেরা তাণ্ডব চালিয়েছে। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তৃণমূল নেতা সুকুমার পাত্র এবং বিকাশ করের দাবি, “ওই সব ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল
জড়িত নয়।”