তৃণমূল বন্ধ বা অবরোধের রাজনীতি করে না, এমন দাবি প্রায়ই শোনা যায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। কিন্তু নানা মামলায় অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে পুলিশ কেন তল্লাশি চালিয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে আসানসোলে ব্যস্ত সময়ে দীর্ঘক্ষণ রাস্তা আটকে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রীর দলের নেতা-কর্মীরাই।
শনিবার সকালে আসানসোল কোর্ট মোড়ের কাছে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক বার্নপুর রোডে অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। নেতৃত্ব দেন দলের স্থানীয় কাউন্সিলর কল্যাণ দাশগুপ্ত। ফলে, দীর্ঘ যানজট হয়। হয়রানি হয় যাত্রীদের। আটকে যায় নির্বাচন কমিশনের একটি
গাড়িও। সেটিকে ঘিরে অবরোধকারীরা বিক্ষোভও দেখান। পরে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে অবরোধ তোলেন।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমরা বন্ধ, অবরোধের বিরুদ্ধে। তবে অনেক সময়ে মানুষের ক্ষোভের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ থেকে এমন হতে পারে। এই বন্ধ-অবরোধ করেই রাজ্যটাকে গোল্লায় পাঠিয়েছে সিপিএম।’’ তাঁর সংযোজন: অবরোধের কারণ খুঁজে দেখা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বর্ধমানে কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানের উপস্থিতিতে সর্বদল বৈঠকে সিপিএম নেতারা অভিযোগ করেন, শাসকদল-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বার্নপুরের বাড়িতে ভোটের আগে অস্ত্র মজুত করা হচ্ছে। কমিশন পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে। শুক্রবার রাতে কৃষ্ণেন্দুবাবুর বার্নপুর রোড লাগোয়া বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে সেখানে কিছু মেলেনি।
এর পরেই এ দিনের অবরোধ। তৃণমূল কাউন্সিলর কল্যাণবাবু দাবি করেন, ‘‘কৃষ্ণেন্দুবাবু এলাকায় সজ্জন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে অভিযানে গিয়ে পুলিশ মোটেই উচিত কাজ করেনি।’’ পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ভুল স্বীকার না করা পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তবে অবরোধের সঙ্গে দলের যোগ নেই দাবি করে কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা অবরোধ করেছেন। আমি তাতে সামিল হয়েছি মাত্র।’’
কাউন্সিলর ‘সজ্জন’ বলে দাবি করলেও পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে কৃষ্ণেন্দুবাবুর। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতোর দাবি, সংঘর্ষ-সহ বেশ কিছু ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর বাড়িতে আমরা তল্লাশিতে গিয়েছি। অভিযানের পদ্ধতিতে কোনও ভুল ছিল না।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লোহা, সিমেন্ট, প্রোমোটারি-সহ নানা রকম ব্যবসা রয়েছে কৃষ্ণেন্দুবাবুর। ভোটের সময়ে তৃণমূলের হয়ে নানা কাজকর্ম করতে দেখা যায় তাঁকে। কৃষ্ণেন্দু বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে অস্ত্র মজুত রয়েছে, সিপিএম এমন তথ্য কোথা থেকে পেল কে জানে! বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। তাঁরা অসুস্থ। তাই এ ভাবে মাঝরাতে পুলিশি হানা অমানবিক।’’
আসানসোলের সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো এখন রাজ্য পুলিশকে নির্বাচন কমিশনের পুলিশ বলে মনে করছেন। তাই তাঁর দলের লোকজন পুলিশি ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও রাস্তায় নৈরাজ্য তৈরি করছে।’’