সমীর রায়। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুরের বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের পর এ বার বর্ধমানের সমীর রায়। দু’জনেই দল ছেড়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম জন কংগ্রেসের হয়ে, দ্বিতীয় জন নির্দল হিসেবে। দুর্গাপুর পশ্চিমের কংগ্রেস প্রার্থীকে দল থেকে আগেই বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। বর্ধমানের সমীর-কাঁটা সামলাতে এ বার সেই বহিষ্কারের পথেই হাঁটল তৃণমূল। সমীরবাবুর ছাড়াও বহিষ্কার করা হয়েছে অন্য এক কাউন্সিলরকেও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭৪ সাল থেকে বর্ধমানের ন’বারের কাউন্সিলর সমীরবাবু। প্রথমে কংগ্রেসে, পরে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০০৬ সালে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীও হন সমীরবাবু। তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১১ সালে মূলত সমীরবাবুর চাপেই এই কেন্দ্রে স্বরূপ দত্তের বদলে প্রার্থী করা হয় রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে। ওই নির্বাচনে রবিরঞ্জনবাবুর প্রার্থীপদের প্রস্তাবকও ছিলেন এই সমীরবাবুই। ২০১৩ সালে তৃণমূল বর্ধমান পুরসভা দখলের পর পুরপ্রধান হওয়ার দৌড়েও উঠে আসে ন’বারের কাউন্সিলর সমীরবাবুর নাম। কিন্তু তার বদলে পুরপ্রধান হন স্বরূপবাবু।
শুধু তাই নয়, সমীরবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, রবিরঞ্জনবাবু মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শহরের পুরনো তৃণমূল নেতৃত্বকে মর্যাদা দিচ্ছিলেন না। বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের বিভিন্ন কাজকর্মেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনুগামীদের দাবি, এই দুইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই সমীরবাবু নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে সমীরবাবুর নাম পোস্টার, ফ্লেক্সে দেখা যায়। সম্প্রতি ঢলদিঘিতে একট বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে মুকুল রায় তৃণমূল কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে সমীরবাবুকে নিয়ে কড়া বার্তা দেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকে মুকুলবাবু কাউন্সিলরদের জানান সমীরবাবুকে বোঝানোর জন্য স্বয়ং দলনেত্রী ফোন করেছিলেন। ওই সূত্রের দাবি, সমীরবাবুকে মুকুলবাবু ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও ফোন করেছিলেন। মুকুলবাবু বৈঠকে বার্তা দেন যাতে কেউ সমীরবাবুর দিকে না ঝোঁকেন, সে দিকে নজর রাখতে হবে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার মুখে মুকুলবাবু জানিয়ে যান, মনোনয়ন পত্র পরীক্ষা হওয়ার পর দল সমীর রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ অনুসারেই দলবিরোধী কাজের জন্য সমীরবাবু ও রত্না রায়কে বহিষ্কার করা হল।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, রত্নাদেবীকে প্রকাশ্যেই সমীরবাবুর হয়ে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে। এমনকী নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতেও দেখা গিয়েছে। যদিও রত্নাদেবী বলেন, ‘‘আমি কী দলবিরোধী করেছি, জানতেই পারলাম না। দল জানালই না আমি বহিষ্কৃত। এ কেমন বহিষ্কার।’’
তবে এই বহিষ্কার নিয়ে বিরোধীরা টিপ্পনি কাটতে ছাড়ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এর আগেও রায়না ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ আনসার আলি বা রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে চড় মারা ঘটনায় অভিযুক্ত এক তৃণমূল কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু ভোটের মুখে তাঁদের ফিরিয়েও নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হবে না তো, কটাক্ষ শহরের এক সিপিএম নেতার।
যদিও এই বহিষ্কারকে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ প্রার্থী সমীরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের কাজ করতে হলে দলের দরকার পড়ে না।’’