তখন বেলা ১২টা। গোপীবল্লভপুরের পদিমা জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠের ১১৭ নম্বর বুথ তখন সুনসান। ভোটার তো দূরের কথা, কারও দেখা নেই।
বুথের একশো মিটারের মধ্যেই জটলা করে রয়েছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। বুথের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দরজার বাইরে একজন বসে রয়েছেন। কেন এখানে বসে আছেন, জানতে চাইলে লক্ষ্মীকান্ত দাস নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি জলবাহক।’’ তাঁর ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়েছিলেন নিশিকান্ত দাস। নিশিকান্তবাবুর গলায় ঝুলছিল জলবাহকের কার্ড। লক্ষ্মীকান্তবাবুর কাছে অবশ্য কোনও কার্ড ছিল না। তাঁর কাছে কেন কার্ড নেই প্রশ্ন করতে কিছুটা থতমত খেয়ে নিশিকান্তবাবু বললেন, ‘‘এখানে একজন জলবাহকেরই থাকার কথা।’’
লক্ষ্মীকান্তবাবু তখনই বলে ওঠেন, ‘‘আমাকে এখানে বসতে বলা হয়েছে। আমি ভোরবেলা সেক্টর অফিসে জল দিয়েছিলাম।’’ তাহলে এখনও বুথে কী করছেন? সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। আপনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত? তখন লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল করি।’’ বুথ চত্বর থেকে লক্ষ্মীকান্তবাবুকে বের করে দেওয়া হচ্ছে না কেন শুনে ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার সন্দীপ গুড়িয়া বলেন, ‘‘বিষয়টি তাঁর জানা নেই।’’ এরপর সন্দীপবাবু এসে লক্ষ্মীকান্তবাবুকে বুথ চত্বর থেকে বের করে দেয়।
এরপরেই অভিযোগ কানে আসে, পেটবিন্দি গ্রামের খুদমারাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১৭ নম্বর বুথের বিজেপি এজেন্ট বুদ্ধেশ্বর দিগারকে অপহরণ করেছে তৃণমূলের লোকেরা। পাশের গ্রাম ভোলেতে বুদ্ধেশ্বেরর বাড়ি। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বুথের বাইরে শৌচকর্ম করতে বেরোন তিনি। সেই সময় কয়েকজন তৃণমূল কর্মী বুথ থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে মারধর করে। দুপুর ১টা নাগাদ তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। বিজেপির গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের যুব মোর্চার সভাপতি সমিত পাত্রের অভিযোগ, ‘‘বুদ্ধেশ্বর যখন শৌচকর্মের জন্য বুথের বাইরে বেরোয়, সেই সময় তাঁকে তৃণমূল কর্মীরা তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।’’
ওই বুথের কাছেই একটি লাল গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ওই গাড়ি করেই বাড়ি থেকে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা হচ্ছিল। গাড়িটি কার? উত্তরে গাড়ির চালক বললেন, ‘‘প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকেই গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ জানা যায়, গাড়িটি স্থানীয় তৃণমূল নেতা মানস দাসের। যদিও মানসবাবুর সঙ্গে ফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার গাড়ি সারাদিন বাড়িতেই ছিল। এ বিষয়ে কিছু জানিনা।”
এ দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত গোপীবল্লভপুরের একাধিক বুথে সে ভাবে ভিড় চোখে পড়েনি। পরে অবশ্য ভোটররা ভোট দিতে আসেন। গজাশিমূল গ্রামের এক মহিলা বলেন, “কাল পর্যন্ত ওঁরা (তৃণমূল) গ্রামের লোকের ওপর নজর রেখেছিল। এখন সেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে তো আমাদের সময় লাগবে। রাস্তায় একটা-দু’টো করে লোক বের হলেই সবাই সাহস নিয়ে বুথে আসবে।”
ভোটে কার পাল্লা ভারী, তা অবশ্য বলবে সময়।