প্রতীকী ছবি।
তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁর খাসতালুক নন্দীগ্রামে জনসভা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মঞ্চ থেকে বিধানসভা ভোটে কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভার পাশাপাশি নন্দীগ্রাম থেকেও প্রার্থী হয়ে লড়াই করার ঘোষণা করেন মমতা। শুভেন্দুও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তৃণমূল নেত্রীকে ৫০ হাজার ভোটে হারানোর ঘোষণা করেন। যার জেরে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামে তৃণমূল ও বিজেপির দ্বৈরথ নিয়ে রাজনৈতিকমহলে আলোড়ন পড়ে যায়।
তৃণমূল নেত্রী নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পরে সম্মান রক্ষার এই লড়াইয়ে তাঁকে বিপুল ভোটে জেতানোর লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দেয় নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লক-সহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ায় তাঁর ঘনিষ্ঠ নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি মেঘনাদ পাল সহ কয়েকজন স্থানীয় নেতৃত্ব বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আবার তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ বিজেপিতে যোগ না দিলেও দলের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে ক্ষোভের কারণে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়। নন্দীগ্রামকে হাতে রাখতে ওই সব নিষ্ক্রিয় নেতাদের ক্ষোভ মিটিয়ে ফের দলের কাজে যুক্ত করতে ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে নামাতে মাঠে নেমে পড়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
নন্দীগ্রামে মমতার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পরে তৃণমূল রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে প্রায়ই নন্দীগ্রামে আসতেন দেখা যাচ্ছে। ব্লক ও অঞ্চল নেতাদের নিয়ে ভোটের প্রচার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনাও করছেন। পাশাপাশি তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা পিকে (প্রশান্ত কিশোরের) টিমের তৎপরতাও শুরু হয়ে গিয়েছে নন্দীগ্রামে। বিভিন্ন কারণে নন্দীগ্রাম- ১ ও ২ ব্লকে তৃণমূলের নিষ্ক্রিয় ও পুরনো নেতাদের সঙ্গে দলের দূরত্ব বেড়েছে। এই অবস্থায় তাই তাঁদের ক্ষোভ মেটাতে আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে দলের হয়ে তাঁরা যাতে প্রচারে নামেন সে জন্য বোঝানোর পালা শুরু করেছেন ব্লক নেতৃত্ব এবং পিকের টিমের সদস্যরা। এর জন্য ব্লক ও অঞ্চল স্তরে টিম গড়া হয়েছে। ওই টিমের সদস্যরা নিষ্ক্রিয় ও পুরনো নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সোনাচূড়া, কেন্দেমারি অঞ্চলের কয়েকজন নিষ্ক্রিয় তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে তাঁদের ক্ষোভ ও সমস্যার কথা শোনার পাশাপাশি দলের হয়ে প্রচারে নামার অনুরোধ করেছেন দলের নেতারা। পিকের টিমের সদস্যরাও আলাদা ভাবে ওই সব নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ দাস বলেন, ‘‘দলের যে সব নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন তাঁদের বোঝাতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েক জনের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। তাতে ভাল সাড়া মিলেছে। এছাড়া পিকের টিমের প্রতিনিধিরা ব্লকের নেতাদের কাছে যাচ্ছেন।’’ দলীয় সূত্রে খবর, সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান কালীকৃষ্ণ প্রধান স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় দু’বছর নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কয়েকদিন আগে দলের ব্লক নেতৃত্ব তাঁকে বোঝানোর পরে ফের তিনি দলের কাজে যুক্ত হয়েছেন। কালীকৃষ্ণ বলেন, ‘‘কিছু বিষয়ে ক্ষোভের কারণে আমি দলের কাজে সক্রিয় ছিলাম না । তবে দলের ব্লক নেতৃত্ব আমার সঙ্গে কথা বলার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর জন্য প্রচারে নেমেছি।’’