জঙ্গলমহলে ভুড়ুড়ে ভোটের হিসেব এখনও স্পষ্ট হয়নি। এরই মধ্যে এ বার পুলিশের মধ্যস্থতায় তৃণমূল ভোট লুঠের ছক কষছে বলে অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরে।
আগামী ১১ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরে যে ১৩টি কেন্দ্রে ভোট, তার মধ্যে সব থেকে নজরকাড়া নারায়ণগড় ও সবং। নারায়ণগড়ে জোট প্রার্থী সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, আর সবংয়ে জোটের হয়ে লড়ছেন কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া। অভিযোগ, এই দুই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নারায়ণগড়ের প্রদ্যোত ঘোষ ও সবংয়ের নির্মল ঘোষের সঙ্গে গত ৪ এপ্রিল, জঙ্গলমহলে ভোটের রাতেই গোপন বৈঠক করেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাংলোয় সেই বৈঠকে তৃণমূল নেতা অমূল্য মাইতি ও সূর্য অট্টও ছিলেন বলে খবর। এ নিয়ে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে বিধিভঙ্গের নালিশ জানানো হয়েছে। দু’টি পৃথক অভিযোগ জানিয়েছেন মানসবাবু ও তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট দুলালচন্দ্র দে।
পালাবদলের পরে জঙ্গলমহলের এই জেলায় বারবার অভিযোগ উঠেছে, শাসক তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে পুলিশ। প্রকাশ্য সভায় তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে সম্বোধন করা, সবংয়ে ছাত্র খুন ও পিংলা-বিস্ফোরণে তৃণমূলকে আড়াল করার চেষ্টা, সর্বোপরি খড়্গপুর পুরভোটে পুলিশ-মাফিয়া যোগসাজশে বিরোধী ভাঙানো— পুলিশ-তৃণমূল ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বারবার সরব হয়েছে বিরোধীরা।
পরিস্থিতি বুঝে এ বার ভোটের মুখে ভারতীকে বদলি করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিরোধীরা অবশ্য সবং-নারায়ণগড়ে পুলিশের মধ্যস্থতায় তৃণমূলের ভোট লুঠের ছকের পিছনেও সেই ভারতীর ছায়াই দেখতে পাচ্ছে। মানসবাবুর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ও ভারতী ঘোষের নেতৃত্বে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত সবং ও নারায়ণগড় থানার ওসির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রার্থীদের নিয়ে পুলিশ কর্তা নিজের বাংলোয় বৈঠক করছেন। নির্বাচন কমিশনে জানিয়েও সুফল পাচ্ছি না।’’
এ দিন কেশপুরে নির্বাচনী প্রচার সভায় ভারতীর নাম না করেই তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন সূর্যবাবুও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘আপনাদের জেলার একজন এসপি ছিলেন। জঙ্গলমহলে ভোটের আগের দিন তিনি কী করতে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন? লুকিয়ে-চুরিয়ে গাড়ি নিয়ে আসছেন, বিভিন্ন থানার অফিসারদের ফোন করছেন। যাদের বসিয়ে ছিলেন যাওয়ার আগে, তাদের ডেকে জেনে নিচ্ছেন, কী ঠিক আছে, কী ঠিক নেই।’’
তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করছে। সবংয়ের তৃণমূল প্রার্থী নির্মলবাবুর দাবি, “আমি কোনও পুলিশ কর্তার কাছে যাইনি। মানস ভুঁইয়া যদি এটা প্রমাণ করতে পারেন তবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।’’ আর নারায়ণগড়ের তৃণমূল প্রার্থী প্রদ্যোত ঘোষের মন্তব্য, “মানসবাবুদের পায়ের তলার মাটি যত হারাচ্ছে, তত মিথ্যে অভিযোগ করছেন। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ বৈঠকের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তও। তাঁর দাবি, ‘‘আমার বাংলোয় কেউ আসেনি। আর কোনও প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠকের প্রশ্নই ওঠে না।’’
শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, শাসক দলের হয়ে পুলিশ কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে বর্ধমানেও। জেলার কয়েকজন ওসি এবং আইসি তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন বলে নির্দিষ্ট ভাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বর্ধমান জেলা সিপিএম। তাদের আশঙ্কা, ওই পুলিশ আধিকারিকদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করা হলে তা অবাধ হবে না। জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের কথায়, “মন্তেশ্বরের ওসি তো বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন, তৃণমূল প্রার্থীকে তিনি জিতিয়ে ছাড়বেন! আমরা কমিশনকে জানিয়েছি।” এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা।