মমতার নামেই ভোট-প্রার্থনা

নারদ ভিডিওতে অস্বস্তিতে তৃণমূল। ভোট বৈতরণী পেরোতে দলের ভরসা এখন মমতার ‘সততা’। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে নির্বাচনী সভায় তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কত সাধারণ, তা বুঝিয়েই ভোট-প্রার্থনা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায়। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। স্যুট-বুট পরা মেয়ে নন। তাঁর সঙ্গে লন্ডনের, আমেরিকার কোনও যোগাযোগ নেই! এমন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বাংলা শাসন করবে? এটা মেনে নিতে ওদের (বিরোধী) অসুবিধা হচ্ছে। তাই কুৎসা-অপপ্রচারের শেষ নেই।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০১:৪১
Share:

তৃণমূল প্রার্থী দীনেন রায়ের সমর্থনে মিছিলে মুকুল রায়। মঙ্গলবার।

নারদ ভিডিওতে অস্বস্তিতে তৃণমূল। ভোট বৈতরণী পেরোতে দলের ভরসা এখন মমতার ‘সততা’। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে নির্বাচনী সভায় তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কত সাধারণ, তা বুঝিয়েই ভোট-প্রার্থনা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায়। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। স্যুট-বুট পরা মেয়ে নন। তাঁর সঙ্গে লন্ডনের, আমেরিকার কোনও যোগাযোগ নেই! এমন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বাংলা শাসন করবে? এটা মেনে নিতে ওদের (বিরোধী) অসুবিধা হচ্ছে। তাই কুৎসা-অপপ্রচারের শেষ নেই।”

Advertisement

এ দিন সকালে মেদিনীপুর সদর ব্লকের জামতলায় খড়্গপুর গ্রামীণের তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের সমর্থনে নির্বাচনী সভা করেন মুকুলবাবু। শুরুতে এলাকায় মিছিল হয়। মুকুল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথা বলে। কেউ কেউ বলে ও পাগল। হ্যাঁ, পাগল বলেই প্রত্যেকের বাড়িতে চাল পৌঁছে দিচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের সাইকেল দেওয়া হচ্ছে, বাচ্চাদের পায়ে জুতো পরানো হচ্ছে। এই রকম পাগল যদি প্রত্যেক ঘরে থাকে ভাল।’’

‘ঘরের ছেলে’ দীনেন রায়কে জেতানোর আবেদন জানিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “বহুদিন আপনাদের একটা দাবি ছিল, ঘরের ছেলেকে প্রার্থী করতে হবে। এ বার ঘরের ছেলে দীনেন রায় প্রার্থী হয়েছেন। দীনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য। দলের প্রার্থীকে জেতাতে হবে।”

Advertisement

এই জামতলার উপর দিয়েই বামেদের সিঙ্গুর-শালবনি জাঠা এগিয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ সামনে এনে মুকুল বলেন, “সিপিএমের জাঠা তো এখান দিয়েই গিয়েছে। কেউ মারতে গেছে? কেউ বাধা দিয়েছে? বরং এক সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর কেশপুরে আক্রমণ হয়েছিল।” আর জোট নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, “এ বার হাত-হাতুড়ি কাস্তে-তারা এক হয়ে গেছে।”

জামতলার পাশাপাশি এ দিন জেলার অন্যত্র আরও কয়েকটি নির্বাচনী সভা করেন মুকুল। সিপিএমের গড় বলে পরিচিত চন্দ্রকোনার কালিকাপুরে দলীয় প্রার্থীর হয়ে সভা করলেন তৃণমূলের সবর্ভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। মঙ্গলবার চন্দ্রকোনা বিধানসভায় দলের প্রার্থী ছায়া দোলইয়ের সমর্থনে মুকুল রায় সভা করেন কালিকাপুরে। উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নিবার্চনেও এই কেন্দ্রটি নিজেদের দখলে ধরে রেখেছিল সিপিএম। তৃণমূল প্রার্থী শিবরাম দাসকে হারিয়ে জয়ী হন তখনকার বাম প্রার্থী ছায়া দোলই। পরে দল বদল করে ছায়াদেবী তৃণমূলে যোগ দেন।

এমনিতেই দলীয় কোন্দল এবং প্রার্থী নিয়ে এখনও চাপা ক্ষোভ রয়েছে দলেরই অন্দরে। তাই এদিন সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত কালিকাপুরে সভায় মাঠ ভরানোই ছিল তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ। দলীয় সূত্রের খবর, বিধানসভার প্রতিটি বুথের নেতৃত্বদের গাড়ি করে দলীয় কর্মীদের সভায় হাজির করার জন্য নির্দেশও দিয়েছিলেন দলের জেলা নেতারা। কিন্তু দলের সবর্ভারতীয় সহ-সভাপতির সভায় লোক দেখে হতাশ দলের ব্লক স্তরের নেতৃত্বরা। কপালে ভাঁজ প্রার্থী ছায়া দোলইয়েরও। দলের এক নেতার কথায়, “ভেবেছিলাম হাজার দশেক লোক ভিডড় করবে। কিন্তু তেমন লোক হয়নি। কেন এণন এমন হল, তা নিয়ে দলীয় স্তরে আলোচনাও শুরু হয়েছে।”

মঙ্গলবার চন্দ্রকোনার সভা করার পর মুকুল রায় দাসপুরে আসেন। সেখানে দলীয় প্রার্থী মমতা ভুঁইয়ার সমর্থনে সভা করেন মুকুল রায়। হাজির ছিলেন দাসপুর-২ ব্লক সভাপতি তপন দত্তও। এ দিনই শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী শ্রীকান্ত মাহাতোর সমর্থনে সভা করেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সুব্রতবাবু এ দিন চন্দ্রকোনা রোডের কাঞ্চনগিরি গ্রামে প্রথমে একটি সভা করেন। বিকাল তিনটের সময় এই সভা সেরে ফের একই বিধানসভা এলাকায় উড়াশাই গ্রামেও একটি সভা করেন দলের রাজ্য সভাপতি।

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement