ভোটে দাঁড়ানোয় তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের শিবসেনা প্রার্থী শিক্ষক ব্রজমোহন চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, তিনি শহরেরই একটি বেসরকারি স্কুলে প্রায় তেইশ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। ভোটে দাঁড়ানোর পর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ নানা ভাবে চাপ দিচ্ছিলেন। শেষমেশ তাঁকে বরখাস্তই করা হল।
ব্রজমোহনবাবু ‘সারদা শিশুতীর্থ’ নামে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। স্কুলটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের শিক্ষা সেল ‘বিদ্যাভারতীর’ অনুমোদিত।
ব্রজমোহনবাবুর বরখাস্তকে ঘিরে শহরজুড়ে রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়েছে। তিনি এক সময় বিজেপির সংগঠক ছিলেন। বিজেপির টিকিটে জিতে এক সময় তিনি নবদ্বীপ পুরসভার কাউন্সিলরও হন। মাস ছয়েক আগে নদিয়া জেলা বিজেপিতে ভাঙন ধরে। দলের কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বিজেপি ছেড়ে শিবসেনাতে যোগ দেন। সেই দলত্যাগীদের তালিকায় ব্রজমোহনবাবুও ছিলেন। ফলে তাঁকে বরখাস্ত করার পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান।
বরখাস্ত হওয়ার পর ব্রজমোহনবাবু খোলাখুলি বলছেন, ‘‘এর পিছনে স্থানীয় বিজেপি ও আরএসএসের হাত রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমাকে ভাতে মারতে চাইছে।” তাঁর অভিযোগ, গত ৬ এপ্রিল স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে চিঠি দিয়ে জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ছুটি নেওয়ার জন্য পঠন-পাঠনে সমস্যা হচ্ছে। তাই তাঁর জায়গায় অন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ব্রজমোহনবাবু বলেন, “আমি শিবসেনার প্রার্থী হওয়ার কারণেই আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সক্রিয় রাজনীতি আমি বহুদিন ধরেই করছি। ২০০৫ সালে বিজেপির কাউন্সিলর ছিলাম। তখন তো অসুবিধা হয়নি। তাহলে আজ কেন অসুবিধা হচ্ছে? আমি স্কুল কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছি। স্কুলে ফিরিয়ে না নিলে আদালতের
দ্বারস্থ হব।’’
সৌরভবাবু অবশ্য বিষয়টির সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি করছেন। তিনি জানান, স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা কম। এই অবস্থায় ব্রজমোহনবাবু দিনের পর দিন স্কুলে আসছিলেন না। তিনি কোনও ছুটিও নেননি। ফলে স্কুল চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
কিন্তু আগেও তো ব্রজমোহনবাবু বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনও তিনি ছুটি নিয়েছিলেন। তাহলে এ বার আচমকা কেন তাঁকে বরখাস্ত করা হল? সৌরভবাবু বলেন, “ছুটি নেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। এ বার উনি তা মানেননি।’’
শিবসেনার নবদ্বীপ শাখার সভাপতি গোপাল গোস্বামী বলেন, “শিবসেনা ওঁনার পাশে আছে। মানুষ বিষয়টাকে ভাল ভাবে নেবেন না। বিজেপি এটা নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করছে।’’ নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি আহ্বায়ক জীবন সেন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, “সব মিথ্যা কথা। আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এটা ওই স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে বিজেপির কী করার আছে! শিবসেনার নবদ্বীপে আছে কি? এ সব রাজনৈতিক চমক ছাড়া কিছুই নয়।”