কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতা এই প্রথম নয়। ইন্দিরা জমানার মতো উত্তাল সময়ে কংগ্রেস সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও বামেরা গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। বললেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতার।
বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তই নিয়েছে সিপিএম। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের নির্বাচনী সমঝোতা সময়ের দাবি। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকে আবার সিপিএম-কে এই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে দেখেই আশ্চর্য হয়েছেন। আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের তরফে তাই অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন ছিল, ‘হিমালয়ান ব্লান্ডার’ করতে অভ্যস্ত যে সিপিএম, যে সিপিএমের ডিএনএ-তে রয়েছে কংগ্রেস বিরোধিতা, সেই সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে মসৃণ ভাবে সমঝোতা সেরে ফেলল কী করে? কংগ্রেস-সিপিএম দুই দলেরই কেরলের নেতারা ঘোর বিরোধী ছিলেন এই সমঝোতার। বাংলায় বামফ্রন্টের অন্য শরিকরাও জোট নিয়ে খুব খুশি নয়। তাও আপাতদৃষ্টিতে মোটামুটি সফলভাবেই সেরে ফেলা গেল সমঝোতা। এমন চোখা প্রশ্নেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না সূর্যকান্ত। বরং মুচকি হেসে নস্যাৎ করলেন হিমলয়ান ব্লান্ডার তত্ত্ব। সিপিএমের ডিএনএ-তে কংগ্রেস বিরোধিতা রয়েছে, এমন তত্ত্বও উড়িয়ে দিলেন ইতিহাস তুলে ধরে। সূর্যকান্ত মিশ্র বললেন, ‘‘ ইন্দিরা গাঁধী যখন ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করেছেন, যখন রাজন্য ভাতা বিলোপ করেছেন, এই সব ব্যাপারে আমরা ওঁকে সমর্থন করেছি। ওঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। কংগ্রেসের ভিতরেই বিরাট বিরোধ হচ্ছে। যখন উনি একটা বিবেক ভোটের ডাক দিলেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে, ভি ভি গিরিকে উনি প্রার্থী করলেন, আমরা ভোট দিয়েছিলাম তখন। আপনি ভাবুন, সে সময় আমরা এখানে আক্রান্ত। কংগ্রেস তখন আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ।’’
বাংলায় নির্বাচনী সমঝোতাকে শুধুমাত্র বাম-কংগ্রেস জোট বলতেও নারাজ সূর্যবাবু। বললেন, ‘‘আমাদের আহ্বান ছিল, সব ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তি এক জায়গায় আসুক। মানুষের জোট গড়ে তোলা হোক।” তৃণমূল আর বিজেপিকে সবচেয়ে বড় বিপদ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।