শিক্ষা সংক্রান্ত একটি ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদও বলছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রান্তিক পড়ুয়াদের কথা ভাবেইনি সরকার। তাঁর কথায়, “লকডাউন পর্বের পরে এটা গড়ার সময়। ডিজিটাল ডিভাইডের সর্বনাশের পরে এখন দেখার কোথায় কোন পড়ুয়ারা কতটা পিছিয়ে। শিক্ষার খামতি দূর করতেও সামাজিক আন্দোলন খুব জরুরি।”
ফাইল চিত্র।
সঙ্কট থেকে মুক্তি নয়! এ যেন নতুন করে লড়াইয়ের শুরু। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক অশোককুমার মুখোপাধ্যায় বলছেন, “দু'বছর লকডাউনের পরে ছেলেমেয়েদের ক্লাসে ফেরানোই চ্যালেঞ্জ। ক্লাস সেভেন, এইট থেকে অনেকেই ক্লাসে আসতে চাইছে না।"
বাঁকুড়ারই গদারডিহি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার বেনজির সুলতানা আবার বলছেন, “হাঁপানির ইনহেলার থেকে প্যারাসিটামল, কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না দীর্ঘ মেয়াদি লকডাউনের কয়েকটি পর্বে। ওই সঙ্কটের দিনগুলি এখনও বিভীষিকার মতো লাগে!”
২০২০ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে যে অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল, ঠিক দু’টো বছর বাদে তার ইতি ঘটছে। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ আগাম কোনও হুঁশিয়ারি ছাড়াই দেশ জুড়ে লকডাউন ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কোভিডের তিনটি ঢেউয়ে তীব্র আতঙ্কের ওঠা, নামায় দু’টো বছর কাটিয়েছে দেশ। এত দিনে দেশ জুড়ে জারি আপৎকালীন বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রত্যাহারের কথা বলছে কেন্দ্র। যার ফলে, হুটহাট লকডাউন দাওয়াইয়ের থেকে এ বার রেহাই মেলার আশা দানা বাঁধছে।
কী শিখিয়ে গেল এই লকডাউন অধ্যায়? ভবিষ্যৎ কর্তব্যের কোন খসড়াই বা তৈরি করে গেল এই দিনগুলি?
তা নিয়ে কাটাছেঁড়াতেও নানা মতই উঠে আসছে। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে কোভিড মোকাবিলার প্রথম সারির যোদ্ধা চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, অতিমারি পর্ব কিন্তু এক ধরনের বিজ্ঞান সচেতনতা শিখিয়েছে। তাঁর কথায়, “মাস্ক বা স্যানিটাইজার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে এই সময়কার গুরুত্ব ভোলা যাবে না। শুধু কোভিড নয় বায়ুবাহিত রোগ মোকাবিলায় মাস্ক বিশেষ ভাবে উপযোগী। জাপান কয়েক দশক ধরে মাস্কপন্থী। কোভিডেও ওরা তার সুফল পেয়েছে। পাশাপাশি, হ্যান্ড হাইজিন বা হাত পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব নিয়েও একটা বোধ তৈরি হয়েছে।”
শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলছেন, “কোভিডের দুর্ভোগ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা বা অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের খামতি নিয়ে আমাদের সচেতন করেছিল। সরকার এটা মাথায় রাখলেই তা কোভিডের শিক্ষা বলা যাবে।”
কার্যত বিনা নোটিসে লকডাউন ডাকার পর্বটিকে কিন্তু হঠকারিতা হিসাবেই দেখছেন অনেকে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে থালা, বাটি বাজিয়ে ‘গো করোনা গো’ হুঙ্কারে উদ্ভট অতিমারির বিরুদ্ধে উদ্ভট যুদ্ধ ঘোষণা দেখেছিল দেশ।
বড় শহরের বাস টার্মিনাস, স্টেশনগুলি ছেয়ে গিয়েছিল ঘরে ফিরতে চাওয়া কার্যত ঈশ্বর পরিত্যক্ত অসহায় মানুষের ভিড়ে। অজানা আতঙ্কে রাতারাতি ঘরবন্দি দশা মেনে নিতে হয়েছিল। নব্য স্বাভাবিকতার নামে কর্মহীনতা বা খিদেও সহ্য করতে বাধ্য হন অনেকে।
সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলছেন, “মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রেও এই সময়টা ভয়ানক ছাপ রেখেছে। অনেক বাড়িতেই নির্যাতিত আর নির্যাতনকারী এক ছাদের নীচে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। শরীরে, মনে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের কথা সরকার ভাবেইনি। বিপদ পরেও আসতে পারে! বিভিন্ন বিজ্ঞানমনস্ক সংস্থার সাহায্য মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারি খসড়া নীতি
ভীষণ দরকার।”
শিক্ষা সংক্রান্ত একটি ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদও বলছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রান্তিক পড়ুয়াদের কথা ভাবেইনি সরকার। তাঁর কথায়, “লকডাউন পর্বের পরে এটা গড়ার সময়। ডিজিটাল ডিভাইডের সর্বনাশের পরে এখন দেখার কোথায় কোন পড়ুয়ারা কতটা পিছিয়ে। শিক্ষার খামতি দূর করতেও সামাজিক আন্দোলন খুব জরুরি।”