পূর্বস্থলীর মাঠে প্রার্থীদের সঙ্গে মহম্মদ সেলিম। নিজস্ব চিত্র।
‘‘লড়ব রে, জিতব রে’’— বর্ধমানের সভা থেকে এই আওয়াজ তুললেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম। সভার পুরো সময় জুড়েই শায়েরি, সরস মন্তব্য, হিন্দি গানের লাইন তুলে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের কটাক্ষ করেন তিনি। ভিড়ের চাপে মঞ্চের এক দিকের ম্যারাপ খুলে দিতে হয় সিপিএম কর্মীদের।
শুক্রবার সকালে পূর্বস্থলীর ছাতনি এলাকায় সভা দিয়ে প্রচার শুরু করেন সেলিম। বিকেলে মেমারির মালগুদাম মাঠে ও সন্ধ্যায় বর্ধমান শহরের বাঁকা নদীর ধারে উৎসব ময়দানেও সভা করেন। বর্ধমানের সভায় একের পর এক মিছিল এসে মেলে। মাঠ ছাড়িয়ে লোকে ভরে যায় রাস্তা। সভা মঞ্চের বাঁ দিকের ম্যারাপও খুলে দিতে হয়। কিন্তু যে শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডই তৃণমূলের দখলে, গত লোকসভা ভোটেও যেখানে তৃণমূল ও সিপিএমের ব্যবধান ছিল প্রায় ৩৭ হাজার, সেখানে এত মানুষ ছিলেন কোথায়? উত্তরটা দিলেন সেলিমই।
মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, “শুধু সিপিএম, শরিক দলের কর্মীরা বা কংগ্রেসের বন্ধুরা নন, মানুষের জোটে সামিল হয়েছেন তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত তৃণমূলেরাও। অনেকে ওই দলের সঙ্গে পা মেলালেও মনের দিক থেকে আমাদের সঙ্গে আছেন।” উপচানো ভিড় দেখে তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘‘১৯ মে -র পর তৃণমূল দলটা ভেঙে পড়বে, তার আগে আমাদের দিকে চলে আসুন।” নতুন বছরের হালখাতার সঙ্গে মানুষও পাঁচ বছরের হিসেব মিটিয়ে নতুন খাতা চালু করবেন বলে তাঁর দাবি। এরপরেই হিন্দি গানের কলি তুলে তিনি বলেন, ‘‘হাল ক্যাইসা হ্যায় জনাব কা? উনার হালও গিয়েছে চালও বিগড়েছে।”
সভায় প্রতি মুহূর্তেই হাততালির ঝড় ওঠে। সিপিএমের বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী আইনুল হকও সাংসদের সুর টেনে বলেন, “সভার ভিড়ই বলে দিচ্ছে তৃণমূলে অশনি সঙ্কেত দেখা দিয়েছে। এই সভা বহিরাগতদের নয়, শহরের মানুষের ভিড়।” সঙ্গে সেলিমের কটাক্ষ, “এ বঙ্গে যত না গরম, তার চেয়ে দিদির মাথা আরও গরম হয়ে গিয়েছে। আসলে তিনি জোটকে ভয় পেয়েছেন।” দলের কর্মীদেরও বহিরাগতেরা বুথে ঢুকলে না বেরোতে দেওয়া পরামর্শ দেন তিনি। সভায় হাজির থাকা বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের সভাপতি (গ্রামীণ) আভাস ভট্টাচার্যও বলেন, “বর্ধমানও ভোটের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে।”
কালনার মাঠে বৃন্দা কারাত।
পূর্বস্থলীতে আবার সেলিমের বক্তব্যের অনেকটাই জুড়ে ছিল ওই কেন্দ্রের প্রার্থী প্রদীপ সাহার তৃণমূল নেতা খুনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিন বছর জেলে কাটানো এবং বেকসুর খালাস পাওয়ার কথা। গত বারেও ওই কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন প্রদীপবাবু। এ দিন সেলিম বলেন, ‘‘প্রদীপ সাহা একজন প্রধান শিক্ষক। আমাদের উল্টো দিকে যারা রয়েছে তারা মিথ্যা মামলায় ওনাকে প্রায় তিন বছর জেল খাটিয়েছে। এ বার ওদের জেলে ভরার ব্যবস্থ্যা করতে হবে।’’ তৃণমূল নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর তোপ, ‘‘দিদির হাত যার মাথায় আছে সে খুন করেও পার পেয়ে যায়। আর যে বিরোধিতা করে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়।’’
সকাল নটায় বড় আমবাগানে সভা শুরু কথা থাকলেও ঘণ্টা খানেক পরে শুরু হয় সভা। রোদের মধ্যেও মাঠ ছিল ভরা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঝুমুর, বাউল, আদিবাসী নৃত্য, ঢাক, ঢোল নিয়ে বেশ কয়েকটি দলকে দেখা যায়। সারদা, নারদ-কাণ্ড নিয়েও সরব হন সাংসদ।
এ দিন সন্ধ্যায় কালনা বিধানসভার দলীয় প্রার্থী সুকুল শিকদারের সমর্থনে জনসভা করেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। অম্বিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ওই সভার শুরু থেকেই রাজ্যে গণতন্ত্র নেই বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘সব ঠিকঠাক থাকলে ইলেকশন কমিশনকে ফুল বেঞ্চ নিয়ে আসতে হতো না। সরকারের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছিল বলেই কমিশনকে এসপি, ওসিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। বীরভূমের এসপি তো অনুব্রত মণ্ডলের অক্সিজেন সিলেন্ডার নিয়ে পিছনে পিছনে যেতেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীকেও তোপ দাগেন তিনি। সিপিএম নেত্রী বলেন, ‘‘দেশে এমন রেকর্ড নেই, যে কোনও মুখ্যমন্ত্রী কমিশনের চিঠি পাওয়ার পরে বলছেন বেশ করেছি, হাজারবার বলব, লক্ষ বার বলব।’’ কৃষকেরা ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত ১৩৯ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন। যার মধ্যে বর্ধমানেই রয়েছে ১৩১ জন। সরকারের দু’টাকা কিলো দরে চাল, গম দেদার দেওয়া হচ্ছে বলে প্রচার করলেও গ্রামে গ্রামে অনেকেই তা পাচ্ছেন না বলেও দাবি করেন তিনি।