প্রিয়াঙ্কা গাঁধী বঢড়া ফাইল চিত্র।
আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে জোটের প্রশ্নকে ঘিরে কার্যত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাশেই দাঁড়ালেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা।
বাংলায় আইএসএফের মতো শক্তির সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস তার আদর্শের সঙ্গে আপস করছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কার বক্তব্য, ‘‘কোনও জোটের শরিকেরা কখনও সব বিষয়েই ১০০% একমত হতে পারে না। সাধারণ কিছু ভাবনার উপরেই জোট হয়।’’ আব্বাস-বিতর্কে অধীরবাবু যা বলেছেন, তার উপরে আর মন্তব্য করতে চাননি প্রিয়ঙ্কা। প্রশ্নকর্তাকে তিনি বলেন, ‘‘আপনি সম্ভবত সোমবারের মন্তব্যের বিষয়ে কিছু জানতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সেই মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন।’’
অধীরবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও তৃণমূলের স্বৈরাচারী শাসনকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ জোটেরই শরিক হয়েছেন। প্রিয়ঙ্কার এ দিনের মন্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে, প্রদেশ কংগ্রেস যে পথে চলছে, তা দলের হাইকম্যান্ডকে অগ্রাহ্য করে নয়। আনন্দ শর্মার মতো কোনও কোনও নেতা যা-ই বলে থাকুন না কেন।
তবে বাংলায় সংযুক্ত মোর্চার মধ্যে আইএসএফের সঙ্গে আসন-রফার জট এখনও কাটেনি। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কথা মাথায় রেখেই এই ব্যাপারে জল মেপে এগোতে চাইছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। প্রকাশ্যে জোটের সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বললেও জোটের মধ্যে আইএসএফ-কে খোলা ময়দান ছাড়তে চাইছেন না তিনি। পরে এই নিয়ে বিরূপ ফল হলে তার ‘দায়’ যাতে পুরোপুরি কংগ্রেসের ঘাড়ে এসে না পড়েস সে দিকে খেয়াল রেখেই ধীরে-সুস্থে পদক্ষেপ করছেন অধীরবাবু। তাতে হয়তো জোটে সময় লাগছে কিন্তু কংগ্রেসের অবস্থান ঠিক রাখতে চাইছেন তিনি।
আইএসএফের মতো শক্তির হাত ধরার সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস নেহরু-গাঁধীর আদর্শ থেকে সরে আসছে বলে সোমবার মন্তব্য করেছিলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা আনন্দ শর্মা। তার কড়া জবাব দিয়েছিলেন অধীরবাবু। আনন্দ আবার এ দিন মুখ খুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার উদ্বেগ থেকেই যা বলার, বলেছি। কংগ্রেসের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সকলকে নিয়ে চলার মতাদর্শের প্রতি আমি অনুগতই আছি। তা ছাড়া, আমি দলের তাত্ত্বিক নেতা ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে এক জন। আমার মন্তব্যকে সেই প্রেক্ষিতেই দেখা উচিত।’’ তাঁর কথার প্রতিক্রিয়ায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যা বলেছিলেন, তাকে পাল্টা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আনন্দ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মতাদর্শগত বিরোধ বা মতের ফারাক থাকলে শিষ্টাচার মেনেই রাজনৈতিক আলোচনা হওয়া উচিত। অধীরবাবু কী বলেছেন, দেখেছি। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত স্তরে নামতে চাই না।’’
অধীরবাবু অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেসের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা দলের নীতি-আদর্শের বাইরে যাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাংলায় সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট একটা ধর্মনিরপেক্ষ জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যার গুরুত্বপূর্ণ শরিক কংগ্রেস। বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের রাজনীতি এবং একটা স্বৈরাচারী জমানাকে পরাস্ত করতে আমরা দৃঢপ্রতিজ্ঞ। যাঁরা বিজেপির বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে নিবেদিত, তাঁদের উচিত বিজেপির সুরে মন্তব্য না করে ভোটমুখী রাজ্যে কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করা।’’ অধীরবাবুর মতে, বাম বা কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বা মৌলবাদী শক্তির হাত ধরেছে বলে হইচই বাধালে আখেরে বিজেপির উদ্দেশ্যই পূরণ করা হয়।
এই জলঘোলার আবহে কংগ্রেসের কোন্দলের ফায়দা নিতে আসরে নেমেছে বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘অধীররঞ্জন চৌধুরী কংগ্রেসের সম্মাননীয় নেতা। দু’বারের প্রদেশ সভাপতি। কিন্তু যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় ওঁকে অসম্মান করা হচ্ছে, আমার মনে হয়, সেটা ঠিক হচ্ছে না। উনি কংগ্রেস ছেড়ে অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন। ওঁর মতো নেতার জন্য জায়গা কম হবে না।’’ আবার বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ডাক দিয়েছেন, ‘‘ভাইজানের হাত থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে হবে।’’
সাম্প্রদায়িক পথে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে চলতি বিতর্কে ইতি টানতে চেয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতার সময় থেকে এই বাংলায় জনসঙ্ঘ ও মুসলিম লিগ, দু’পক্ষেরই বিধায়ক ছিল। তার পরে দীর্ঘ সময় বাংলার সমাজ বিভাজনের রাজনীতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছরে আবার ধর্ম, জাতপাতকে রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে ‘জয় শ্রীরাম’ বা ‘ইনশা আল্লা’ কোনওটাই না বলে কাজ, শিক্ষা, সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে সকলকে এক সূত্রে বেঁধে যদি আবার বিভাজনের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা হয়, তাতে আপত্তি কীসের!’’