সুলতা সিকদার। —নিজস্ব চিত্র
প্রতিবন্ধকতা তাঁকে কাবু করতে পারে না। তা সে শরীরের হোক বা সংসারের। এই সাহসিকতা স্পেশাল অলিম্পিকের আসরে তাঁকে পরিয়েছে সাফল্যের মুকুট। খেলার মাঠে তাঁর উদ্যম কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছে সকলের। শুধু নানা প্রতিবন্ধকতাযুক্ত বা প্রান্তিক মানুষ নন, বিভিন্ন কারণে যাঁরা ভোটদানে নিরুৎসাহী, তাঁদের উৎসাহ দিতে হুগলি জেলা প্রশাসন এ বার ‘আইকন’ হিসেবে বেছে নিয়েছে বলাগড় ব্লকের জিরাটের বছর কুড়ির সুলতা সিকদারকে।
সুলতা এ বারেই প্রথম ভোট দেবেন। প্রশাসনের আশা, তাঁর উদ্যম অন্যদের ভরসা জোগাবে। জেলাশাসক দীপপ্রিয়া পি জানান, সবাইকে ভোটদানের আর্জি জানিয়ে সুলতা একটি বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তা ইউটিউবে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্যা ভাবে প্রচারেও সুলতার কথা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
সুলতা মানসিক ভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আবুধাবিতে স্পেশাল অলিম্পিকে সাইক্লিং ইভেন্টে (১০ কিলোমিটার রোড রেস) নেমেছিলেন সুলতা। সেখানে বাকিদের পিছনে ফেলে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। তাতে মুখ উজ্জ্বল হয়েছিল বাংলার তথা দেশের। শুধু নিজের শরীরের সমস্যাকে হারানোই নয়, সুলতা প্রতিপদে পরাস্ত করেছেন পরিবারের অভাবকেও।
জিরাটের হাসিমপুরে রেললাইনের ধানে টিনের ছাউনির ঘরে বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে থাকেন ওই যুবতী। বাবা প্রশান্ত সিকদার এবং মা অণিমা— দু’জনেই দিনমজুর। সুলতা ছোট থেকেই ‘আস্থা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে জিরাটের বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তিনি এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়েন। বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী।
ভোটে জেলা প্রশাসনের ‘আইকন’ হয়ে সুলতা আনন্দিত। তিনি বলছেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। এই বার প্রথম ভোট দেব। সকলের ভোট দেওয়া উচিত। সবাই যাতে ভোট দেন, সেটাই বলব।’’ মেয়ের সম্মানে খুশি অণিমা বলেন, ‘‘খুব কষ্ট করে মেয়েটা এত দূর পৌঁছেছে। মেয়ে সকলের কথা বলবে, সবাই ওকে চিনবে এর থেকে ভাল কী হয়!’’ খুশি ‘আস্থা’র সম্পাদক তথা শিক্ষক অচিন্ত্য দত্তও। জেলাশাসক জানান, সার্বিক ভাবে ভোটারদের উৎসাহিত করতে প্রচার চালানো হবে। এ ক্ষেত্রে নবীণ বা মহিলা ভোটারদের বিশেষ ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার হুগলি উইমেন্স কলেজে পড়ুয়াদের নিয়ে অনলাইনে এ ব্যাপারে উৎসাহদানের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল।