শিলিগুড়িতে সীতারাম ইয়েচুরি। —নিজস্ব চিত্র।
নিচুতলার চাপে কংগ্রেসের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়ছেন তাঁরা। তবে সেই জোট ক্ষমতায় এলে তাদের মন্ত্রিসভা কী ভাবে গঠিত হবে, মুখ্যমন্ত্রীর পদে কে বসবেন, এ সব নিয়ে এখনও ভাবার সময় আসেনি বলেই মনে করেন সীতারাম ইয়েচুরি। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে হিলকার্ট রোডে দলের কার্যালয়ে অশোক ভট্টাচার্যকে পাশে নিয়ে বসে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘‘দিল্লি বা কলকাতায় বসে নেতারা জোট করিনি। নেতৃত্বের মধ্যে কোনও চুক্তি হয়নি। নিচুতলার মানুষ এটা করেছেন। মানুষের চাওয়ার উপরেই সব হচ্ছে।’’
ক্ষমতায় এলে তাঁরা যে তৃণমূল আমলের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করাবেন, সে কথাও স্পষ্ট করে দিলেন ইয়েচুরি। বললেন, ‘‘জিতলে নিশ্চয়ই দুর্নীতির তদন্ত করা হবে। সারদা, নারদ, ফ্লাইওভারের ঘটনা সমস্ত তদন্ত করতে হবে। দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।’’
ক্ষমতায় এলে জোট কী ভাবে চলবে? সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পদ হবে, না কংগ্রেস থেকে কেউ বসবেন? বাইরে থেকে সিপিএম সমর্থন দেবে, না কংগ্রেস দেবে? ইয়েচুরি জানালেন, জোট তো হয়ে মানুষের চাহিদা মেনে হয়েছে। যেমন শিলিগুড়িতে আগে হয়েছে। পুরভোটে মানুষ জোট চেয়েছিলেন। পরিস্থিতি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আসে। এর পর বোর্ড কী ভাবে হবে, সেটা আগে ঠিক ছিল না। ভোটের পর তা ঠিক হয়। তিনি বলেন, ‘‘এখন তৃণমূলকে পরাজিত করাটাই মূল লক্ষ। জোটে কে কী হবে, সেটা আমরা নির্ধারণ করছি না। জনগণ যে ভাবে চাইবে, সেই ভাবে ভাবা হবে। ভোটের ফলাফল দেখে তার পরেই ভাবা হবে।’’ নির্বাচনের পর ফলাফলে বামেরা বা কংগ্রেস যারা এগিয়ে থাকবেন, তবে কি তারাই অগ্রাধিকার পাবেন? ইয়েচুরির জবাব, ‘‘যদি দিয়ে কোনও রাজনীতি হয় না। আগে মানুষকে নির্বাচিত করুন। ফল দেখেই ভাবা হবে।’’
বিভিন্ন জেলাতেই এখন সিপিএম, কংগ্রেস নেতৃত্বকে একযোগে প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। শিলিগুড়িতে অশোক ভট্টাচার্য মনোনয়ন জমা করতে যাওয়ার সময় কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার এবং অন্য নেতা-কর্মীরা অনেকেই ছিলেন। শঙ্করবাবু মনোনয়ন জমা করার সময় তেমনই অশোকবাবুরা সঙ্গে থেকে জোটের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। যদিও সে ক্ষেত্রে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একযোগে প্রচারের বিষয়টি নিয়ে কোনও কিছু ভাবা হয়নি বলে জানান সিপিএমের এই কেন্দ্রীয় নেতা। কংগ্রেসের প্রচারে আসছেন রাহুল গাঁধী। তাঁর সঙ্গে একই মঞ্চে কি তিনি থাকবেন? ইয়েচুরির জবাব, ‘‘এই জোট নেতৃত্বের মধ্যে নয়। যা হচ্ছে মানুষের ইচ্ছেতে হচ্ছে। কে কোথায় থাকবেন, থাকবেন না, দলীয় স্তরে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে তা করা হচ্ছে না।’’
সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ এই জোটের সম্ভাবনাকে শুধু রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ দেখছেন না। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও জোট হবে বলে সিপিএম নেতৃত্বের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ইয়েচুরির জাবাব, ‘‘দেশের মানুষ চাইলে তখন হবে। এখানে আগাম পরিকল্পনা নিয়ে কিছু হচ্ছে না।’’ সিপিএম নেতৃত্বের কথায়, পাঁচ বছরের দুর্নীতি, প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জনগণ জোট করেছে। তেমনই কেন্দ্র থেকে বিজেপি হঠানোর ডাক তাঁরা দিচ্ছেন।