প্রথম দফার ভোটগ্রহণে গাফিলতি থাকায় ছয় অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। পরের ছ’দফায় ভোটকর্মীরা যাতে আরও সতর্ক হয়ে কাজ করেন, সেই বার্তা দিতেই কমিশনের এই সিদ্ধান্ত।
নোটিস পাওয়া অফিসারদের মধ্যে রয়েছেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের এক জন সেক্টর অফিসার, দু’টি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ৬ জন ভোটকর্মী। মেদিনীপুর বিধানসভার রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক (সদর) আফতাব আহমেদ ওই নোটিস দিয়ে তাঁদের সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছেন। জবাব সন্তোষজনক না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে ইঙ্গিত।
মেদিনীপুরের নজরগঞ্জের বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের ২৪০ নম্বর বুথে ভোট শেষে দেখা যায়, খাতায়কলমে যে সংখ্যক ভোট পড়েছে, ভোটযন্ত্র তার চেয়ে বেশি ভোট দেখাচ্ছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে বোঝা যায়, সকালে ভোট শুরুর আগে রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের সামনে যে নকল ভোটগ্রহণ হয়েছিল, তা আর ভোটযন্ত্র থেকে মুছে ফেলা হয়নি। কমিশন এই ঘটনায় রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করে।
কমিশনের এক কর্তা জানান, ভোটযন্ত্রে যে কোনও গোলমাল নেই, তা এজেন্টদের বুঝিয়ে দিতেই নকল ভোট করা হয়। সেখানে প্রত্যেক দলের এজেন্ট বেশ কয়েকটি করে ভোট দেন। সেই ফলাফল দেখিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ভোটযন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে। তার পর নকল ভোটের ফলাফল মুছে ফেলে শুরু হয় আসল ভোটগ্রহণ। ওই কমিশন কর্তার কথায়, ‘‘যে সেক্টর বা প্রিসাইডিং অফিসার এই কাজটুকুও ঠিকমতো করতে পারেন না, তাঁদের শাস্তি পাওয়া উচিত। কারণ, ওই ভুলের জন্য বুথটিতে আবার ভোট নিতে হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এ বার ভোটকর্মীদের চার দফা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলে এই ভুল কখনওই হতো না।” ওই বুথের দায়িত্বে থাকা সেক্টর অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, ফার্স্ট পোলিং অফিসার, সেকেন্ড পোলিং অফিসার, থার্ড পোলিং অফিসার এবং অ্যাডিশন্যাল সেকেন্ড পোলিং অফিসারকে শো-কজ করা হয়েছে।
আসলে পরের দফার নির্বাচনে যে অফিসার-কর্মীরা কাজ করবেন তাঁদের একটি বার্তা দেওয়ার জন্যই নির্বাচন কমিশন শাস্তির খাঁড়া ঝুলিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ভোট পরিচালনার অভি়জ্ঞতা রয়েছে এমন এক কর্তার কথায়, ‘‘বার্তাটি স্পষ্ট। কমিশন স্বচ্ছ ভাবে ভোট করাতে চায়। সে ক্ষেত্রে গাফিলতি হলে ছাড় পাবেন না কেউ।’’
প্রথম দফার ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার কিছু বুথে প্রায় ১০০% ভোট পড়েছে। যা দেখে বিস্মিত নির্বাচনের কাজে অভিজ্ঞ অনেকেই। তাঁদের ধারণা, এর পিছনে ভূতের ন়ৃত্য থাকলেও থাকতে পারে। এবং সেটা হলে ভোটকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সম্ভব বলেও মনে করছেন অনেকে। এ ব্যাপারে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে চাপ বাড়িয়েছেন বিরোধী জোটের নেতারা। সরব হয়েছে বিজেপি। কমিশনও বলেছে, শান্তিতে স্বচ্ছ ভোট করাতে তারা বদ্ধপরিকর। পরের ছ’দফা ভোটে সর্ষের ঝাঁঝ যে বাড়বে, ৬ অফিসারকে শো-কজ করার মধ্যে দিয়ে কমিশন তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখল বলে মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি এ দিনই ভোটের দিন করণীয় হিসেবে আরও এক দফা নির্দেশিকা রাজ্যে পাঠিয়েছে কমিশন (বক্স দেখুন)। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “প্রথম দফার পর কিছু নতুন নির্দেশ পেয়েছি। আমরা কমিশনের প্রতিটি নির্দেশ মেনেই কাজ করব।”