দুর্বল বিরোধী সংগঠন আর উন্নয়নই বাজি শাসক দলের

প্রচার আদৌ যদি মাঠকাঠি হয়, তা হলে বলতেই হবে এ তল্লাটে ঘাসফুলের দাপটে বিরোধী জোট বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে। তাদের যে টুকু প্রচার তা যেন নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৪
Share:

প্রচার আদৌ যদি মাঠকাঠি হয়, তা হলে বলতেই হবে এ তল্লাটে ঘাসফুলের দাপটে বিরোধী জোট বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে। তাদের যে টুকু প্রচার তা যেন নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই।

Advertisement

যদিও বিরোধী জোট বলছে, ওটা কোনও বিষয় নয়। প্রচার দেখে মানুষ ভোট দেন না। এই পাঁচ বছরে ওঁদের (তৃণমূল) নেতা-মন্ত্রীরা কত ফুলে- ফেঁপেছেন, তোলাবাজির কত টাকা তাঁদের সিন্দুকে ঢুকেছে মানুষ সে সব জানে। ভোটের মাধ্যমেই তার উত্তর দেবেন তাঁরা।

২ লক্ষ ১০ হাজার ভোটার। ২৫৩টি বুথ। সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও একটি পুরসভা নিয়ে সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১১ পর্যন্ত এখানে বামপন্থীদেরই দাপট দেখে এসেছেন মানুষ। কিন্তু গোটা রাজ্যের সঙ্গে সপ্তগ্রামও গত বিধানসভায় বামেদের থেকে মুখ ঘুরিয়েছে। তার পর থেকে লোকসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলেরই জয় দেখেছে মানুষ। কিন্তু এই পাঁচ বছরে সারদা, নারদ, নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ সেতু ভেঙে পড়া-সহ নানা দুর্নীতি নিয়ে শাসক দল যে ভাবে ব্যাকফুটে তাতে তুঙ্গে উঠেছে তাদের সঙ্গে জোটের ভোট-তরজা।

Advertisement

সংখ্যার সোজাসাপটা হিসেবে এখানে তৃণমূল বিরোধীদের থেকে এগিয়ে। এলাকার সাতটা পঞ্চায়েতের সবকটিই তাদের দখলে। পুরসভাও তাদের পকেটে। গত লোকসভায় তৃণমূল এখানে ৭২,৮১৭টি ভোট পেয়েছিল। সিপিএম পেয়েছিল ৪৯,৮০২টি ভোট। বিজেপি পায় ৩৫,৫০৫টি ভোট। ২০১১ সালে বিধানসভায় তৃণমূল পেয়েছিল ৯০,২৮৯টি ভোট। সিপিএম ৫৯,৪২১টি এবং বিজেপি পায় ৩৫৫৯টি ভোট। ২০১১-য় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকায় তৃণমূলের পকেটে গিয়েছিল তাদের ভোট। এবার কংগ্রেস-বাম জোট হওয়ায় দুটো ভোট এক জায়গায়। লোকসভায় বিজেপি-র ভোট জোট না কি রাজ্যের শাসকের পক্ষে যায় সেই জটিল অঙ্কই এ বার হিসেব বদলে দিতে পারে ব্যালট বাক্সে।

জোটের প্রার্থী কংগ্রেস নেতা দিলীপ নাথের এলাকায় রীতিমত পরিচিতি আছে। বর্ষীয়ান এই নেতাকে এক ডাকে টেনেন সবাই। কিন্তু ভোটের ময়দানে টক্কর দিতে অন্য আরও অনেক রসায়ন জরুরি। যার অন্যতম জোরদার সংগঠন। এক সময় সপ্তগ্রামে কংগ্রেসের সংগঠন মজবত ছিল। কিন্তু ২০১১ পরবর্তীতে তৃণমূলের হাওয়ায় তা অতীত। ফলে কংগ্রেস নয়, সিপিএমের উপরই মূলত নির্ভর করতে হচ্ছে দিলীপবাবুকে। তাঁর কথায়, ‘‘গত পুরসভা নির্বাচনে নজিরবিহীন সন্ত্রাস এলাকার মানুষ দেখেছেন। তার উপর মাটি ব্যবসা, রাস্তাঘাট, পঞ্চায়েতের কাজে দুর্নীতি। কোথাও টাকা ছাড়া কাজ হয় না। ডানলপ নিয়ে প্রতিবার ভোটের আগে রাজনীতি হয়েছে। এ সব মানুষ দেখছেন। তাঁরাই বিচার করবেন।’’

জোটপ্রার্থীর এমন আক্রমণকে আমলই দিচ্ছেন না তৃণমূলের প্রার্থী তথা জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি এ সব বলতেই পারেন। তবে মানুষও এলাকার উন্নয়নটা পরখ করছে। আগে কী ছিল আর এখন কী হয়েছে? আমার এলাকার প্রতিটি জায়গায় পানীয় দল পৌঁছেছে। রাস্তাঘাট, আলোর কাজ হয়েছে। একটা স্টেডিয়ামের টাকা এসে গিয়েছে। ভোট এসে পড়ায় কাজটা শুরু হয়নি। গঙ্গার উপর জেগে ওঠা চরে ইকো ট্যুরিজম পার্ক তৈরির পরিকল্পনা পাকা।’’

আইনজীবী হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে বিজেপি প্রার্থী আইনজীবী সুশান্ত ঘোষের। কিন্তু দুর্বল দলীয় সংগঠন তাঁকে অনেকটাই সমস্যায় ফেলছে। সপ্তগ্রামে এবার একমাত্র বামপন্থী প্রার্থী সিপিআই (এম এল)-এর সজল অধিকারী। পেশায় শিক্ষক এই প্রার্থী সারা বছর নানা দলীয় কর্মসূচীর মধ্যে থাকেন। তবু তাঁর পক্ষে বাম ভোট কতটা হেলবে তা সময়ই বলবে। এই আবহে সপ্তগ্রামে কে শেষ হাসি হাসবে তার উত্তর পাওয়া যাবে ১৯ মে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement