বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা নজরকাড়ার মতো। ছবি: দেবাশিস রায়।
‘‘কে শ্রীনু নাইডু? আমি তো চিনি না!’’
‘‘কে ভারতী ঘোষ? আমি তো চিনি না!’’
প্রথম সংলাপ রমাপ্রসাদ তিওয়ারির। খড়্গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী।
দ্বিতীয়টি শ্রীনু নাইডুর। খড়্গপুরের একদা ত্রাস রেল-মাফিয়া রামবাবুর জায়গাটি যিনি এখন নিয়েছেন বলে কথিত।
সোমবার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণের দিনে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই রেল শহরের আনাচে-কানাচে শ্রীনু নাইডু এবং ভারতী ঘোষের নাম শোনা গিয়েছে বিরোধীদের মুখে।
কেন? কারণ, বিরোধীদের অভিযোগ, এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীকে জেতাতে কোমর বেঁধে নেমেছেন তেলুগুভাষী এই শ্রীনু। বয়স বছর ২৬। তাঁর স্ত্রী পূজা খড়্গপুর পুরসভার কাউন্সিলর। শোনা যায়, এই শ্রীনুই একদা সঙ্গী ছিলেন রামবাবুর। নানা মামলায় একাধিক বার জেলও খেটেছেন তিনি। ২০১২-য় জেল থেকে বেরিয়ে তিনি রামবাবুকে লক্ষ্য করে গুলিও চালান বলে অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় ফের জেলে যেতে হয় শ্রীনুকে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত।
এ হেন শ্রীনু মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের স্নেহধন্য বলে বিরোধীদের অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভারতী ঘোষ এখন জেলায় না থাকলেও সপ্তাহে দু’দিন করে খড়্গপুরে আসেন সিআইডি-র ডগ স্কোয়াডের কাজকর্মের জন্য। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, তিনি এখানে এসে নানা ভাবে ভোটের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন।
লালগড়ে প্রথম পর্বের প্রথম দফার ভোটে যে ছবিটা দেখেছিলাম, এখানে অবশ্য তার থেকে কিছুটা আলাদা ছবি চোখে পড়েছে। এখানে বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা নজরকাড়ার মতো। কিন্তু, বুথের বাইরের জটলা সরাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা এখানেও চোখে পড়েনি।
বুথের পর বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট নজরে না এলেও ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহনপালের উপস্থিতির জন্যই হয়তো কংগ্রেসের এজেন্টদের চোখে পড়েছে। খড়্গপুর অবশ্য বরাবরই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। যদিও ২০১১-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূল এই কেন্দ্রে জিতেছিল। জেতার ব্যাপারে নবতিপর ‘চাচা’ খুবই আশাবাদী। তিনি বলছেন, ‘‘আমি জিতবই। মানুষ আমায় ভালবাসে।’’
একদা খড়্গপুর দাপিয়ে বেড়ানো রামবাবু যদিও এখন অনেক শান্ত। এ বারে তাঁর ভূমিকা কী? কতটুকু? রামবাবু বলছেন, ‘‘আমি সক্রিয় রাজনীতিতে নেই। তবে এখনও রাস্তায় দাঁড়ালে হাজার মানুষ ঘিরে ধরেন। তাঁদের নানা অভাব-অভিযোগের কথা বলেন। এখনও মেয়ের বিয়ে-সহ নানা ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রতিকার চান।’’
নানা পক্ষেরই বেশ ‘ফিল গুড’ প্রতিক্রিয়া মিলেছে বটে, তবে দিনভর খড়্গপুরের ইন্দা, গোলবাজার, বড়আইমা, মালঞ্চ সমেত নানা জায়গা ঘুরে এই কেন্দ্রের ভোটযুদ্ধের নেপথ্য কারিগরদের সম্পর্কে নানা কাহিনি আর অভিযোগের কথা কানে আসে।
শোনা যায়, কেউ কেউ সামনে থেকেও প্রকাশ্যে নেই, আবার কেউ কেউ অপ্রকাশ্যে থেকেও কাছাকাছিই আছেন!