কুলটিতে রাহুল গাঁধীর সভার প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৈলেন সরকার।
প্রথমে আপত্তি ছিল। এখন সে সব অতীত! কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সমাবেশ সফল করার জন্য জোরকদমে মাঠে নেমে পড়েছেন বর্ধমান জেলার শিল্পাঞ্চলের সিপিএম নেতা-কর্মীরা।
রাজ্যে প্রথম দফায় প্রচারে এসে কাল, শনিবার বর্ধমানের কুলটি ও দুর্গাপুরে সভা করার কথা রাহুলের। বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় এ বার কুলটি এবং দুর্গাপুর পশ্চিম আসনটি পেয়েছে কংগ্রেস। রাহুলের সভায় হাজির থাকার জন্য কংগ্রেসের তরফে বামফ্রন্ট নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আলিমুদ্দিন থেকে বর্ধমান জেলা সিপিএমের কাছে নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে, কুলটির সভায় দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী ও দুর্গাপুরের সভাটিতে পাণ্ডবেশ্বরের দলীয় প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় হাজির থাকবেন। শুধু প্রতিনিধি পাঠানোই নয়। বিভিন্ন এলাকার সমর্থকদের সভায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় থেকে শুরু কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পতাকা-ফেস্টুন বাঁধা— সব কাজেই নেমে পড়েছেন সিপিএম কর্মীরা।
প্রায় একই চিত্র বাঁকুড়াতেও। সেখানে রাহুল একটিই সভা করবেন এ যাত্রায়। সেই সমাবেশে লোক ভরানোর জন্যও মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে সিপিএম।
বাঁকুড়ায় অবশ্য কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু কিছু দিন আগেও ছবিটা অন্য রকম ছিল বর্ধমানে! দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে বর্ধমানের সিপিএম নেতারা দাবি করেছিলেন, তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। সে জন্য যদি দল শাস্তি দেয়, তা মাথা পেতে নেবেন! এই মর্মে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল আলিমুদ্দিনে। কিন্তু সেই বর্ধমানেই রাহুলের সভার জন্য সিপিএমের ব্রিগে়ড তৎপর! জেলা সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, গোড়ায় জোটের বিরোধিতা করলেও আসন সমঝোতার পরে দু’দলের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে যে ধরনের সাড়া পেয়েছেন, তা দেখেই মত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তাই আগের অবস্থান থেকে সরে এসে নানা সভা-সমিতিতে বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষেই কথা বলছেন নেতারা। রাজ্য কমিটির বৈঠকে জোটের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন যিনি, সিপিএমের জেলা সম্পাদক সেই অচিন্ত্য মল্লিক নিজেই সম্প্রতি দুর্গাপুরে কংগ্রেস
প্রার্থী বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের সমর্থনে পদযাত্রা করেছেন। অচিন্ত্যবাবু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা অতীত সব ভুলে গিয়েছি। এখন আর কিচ্ছু মনে নেই! দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এক সঙ্গে কাজ হবে। তা একশো শতাংশ কার্যকর করা হবে।’’
আসানসোলে সিপিএমের নিচু তলার কর্মীদের একাংশ অবশ্য বলছেন, রাহুলের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য তলায়-তলায় প্রস্তুতি আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। অপেক্ষা ছিল শুধু উঁচু তলার অনুমতির। বুধবার তা এসে পৌঁছতেই আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু হয়েছে। আলিমুদ্দিনের নির্দেশ এসে পৌঁছনোর পরেই আসানসোল জোনাল
দফতরে বৈঠক করেন সিপিএম নেতারা। আসানসোল মহকুমার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কী ভাবে লোক আনা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এক সিপিএম নেতার দাবি, ‘‘অন্তত ৪০ হাজার লোক আমরাই জড়ো করব।’’ সন্ধ্যায় কুলটিতে সিপিএম এবং কংগ্রেসের কর্মীরা এক সঙ্গে রাস্তায় পোস্টার সাঁটান। মাইকে প্রচার করতে কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন সিপিএম কর্মীরাও। কুলটিতে এ দিন সকালে সভার মাঠ পরিদর্শন করেন দু’দলের নেতারা। সিপিএমের কুলটি জোনাল সম্পাদক সাগর মুখোপাধ্যায় জানান, সভা আয়োজনে কংগ্রেসকে সব রকম ভাবে সাহায্য করবেন তাঁরা।
সভা আয়োজনে বাম কর্মীদের পাশে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরাও। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘সভার মাঠ ভরানো নিয়ে আর কোনও চিন্তা থাকছে না!’’ কংগ্রেসের বর্ধমান জেলা সাধারণ সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, কুলটিতে তাঁরাই হাজার পঁচিশ সদস্য-সমর্থক জমায়েত করবেন। আর আসানসোলের এক সিপিএম নেতার আক্ষেপ, ‘‘কুলটির ডেইডিহি মাঠের বদলে সভাটা আসানসোলের পোলো মাঠে হলে ভাল হতো! দ্বিগুণ লোক জড়ো করে দেখিয়ে দিতাম!’’
তবে রাহুলের সভা নিয়ে বাম-কংগ্রেসের এই উদ্দীপনাকে আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘মানুষ ওদের বর্জন করেছে। দু’দলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওরা যতই লাফাক, ভোটে জেতার কোনও আশা নেই!’’