কাগজেকলমে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকলেই কাজ হবে না, রাস্তা নেমে তাদের কাজ করতে হবে। ভোটারদের মনে আস্থা ফেরাতে হবে। হাতের কাছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানকে পেয়ে একযোগে এমনই দাবি করলেন বীরভূমের বিরোধী দলের নেতারা।
কেন এই দাবি করলেন?
বিরোধীদের এক রা—এই জেলার শাসকদলের মাথায় যে বসে রয়েছেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডল নামে এক নেতা! অভিজ্ঞতা বলছে, যাঁর দাপটে গত পঞ্চায়েত, লোকসভা থেকে পুর-নির্বাচন—ট্যাঁ ফোঁ পর্যন্ত করার সাহস হয়নি বিরোধী নেতা-কর্মীদের! বিধানসভা ভোটের মুখেও একই ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। বিশেষ করে সম্প্রতি বারবার দলীয় বৈঠকে ও প্রকাশ্যে অনুব্রত বলছেন, নির্বাচন কমিশন-কেন্দ্রীয় নিতে বাহিনী বেশি দিনের ‘অতিথি’ নয়। তার পরে থাকবেন ‘তাঁরাই’। পাশাপাশি প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অন্তত ৫০ হাজার লিড নেওয়ার নির্দেশও গিয়েছে দলীয় কর্মীদের কাছে।
গত মঙ্গলবার বোলপুরে দলীয় বৈঠকের যে অডিও ক্লিপ সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে, তাতে অনুব্রতকে বিরোধী ভোটারদের প্রত্যক্ষ হুমকি দিতেও শোনা গিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কমিশন-বাহিনী ভোটের দিন পর্যন্ত। তার পরে আমরাই ‘কন্টিনিউ’ থাকব। সেই বুঝে কাজ করুন।’’ ওই বক্তৃতার কারণে কমিশন তাঁকে শো-কজ করলেও আশঙ্কা কাটছে না বিরোধীদের। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী যে সাময়িক ভাবে থাকবে, পরে রাজ্য পুলিশের ‘ভরসা’তেই জনতাকে থাকতে হবে।
এই অবস্থায় কমিশনের পর্যবেক্ষককে পেয়ে বিরোধীরা একযোগে বাহিনীকে সক্রিয় হয়ে কাজ করার দাবি তুলেছেন। রবিবার প্রথমে বর্ধমানে বৈঠক করে হিমাচলপ্রদেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক তথা বীরভূম-বর্ধমান-পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানের নেতৃত্বে কমিশনের পাঁচ সদস্যের দল। বোমা-বন্দুকের আড়ত ও অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল বলে পরিচিত বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের সংযোগস্থল ফুটিসাঁকোয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে বলেন চৌহান।
বর্ধমান থেকে বীরভূমে ঢুকে বিকেলে সিউড়িতে ঘণ্টা দেড়েক জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন চৌহান। সেখানেই তাঁদের কাছে নিজেদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, গত লোকসভাতেও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু, বাস্তবে উল্টোই ঘটেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত বসিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিক কমিশন, এ দিন চৌহানের কাছে এই দাবি করেন বিরোধীরা। শাসকদলের হুমকির মুখে ভোটারেরা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন এবং শুধু নির্বাচনের দিনটুকুই নয়, ভোটের আগে ও পরে যেন রক্ত না ঝরে— তার দিকেও যেন বিশেষ নজর দেয় কমিশন। বিরোধীদের প্রত্যেকেই সেই আর্জি চৌহানের কাছে জানান। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘এই জেলায় গত কয়েকটি ভোট কেমন হয়েছে, তা সবাই জানেন। সে কথাই
আমরা এ দিন কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি।’’
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে চৌহান জানান, বীরভূমের প্রস্তুতিতে তিনি মোটের উপর সন্তুষ্ট। যদিও এখনও বকেয়া থাকা সাড়ে তিনশো পরোয়ানা দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। বীরভূমের ইতিহাসকে মাথায় রেখে কমিশন অবাধ ভোট সুনিশ্চিত করতে কি ব্যবস্থা নেবে? বিশেষ পর্যবেক্ষকের জবাব, ‘‘যথেষ্ট পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোটা আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। এ বার সেটাই হবে। তাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানো যাবে।’’ কী বলছেন
অনুব্রত নিজে? বলছেন, ‘‘বৈঠকে আমাদের দলের প্রতিনিধিও ছিলেন। গতবারের ভোট নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ শুনেছি। আমার একটাই বক্তব্য, বীরভূমে আগেও অবাধ ভোট হয়েছে।
এ বারও হবে।’’