‘দিদি’র আর্তিতে দুর্বলতার খোঁজ পাচ্ছে বিরোধীরা

লোহা চুরির মামলায় জড়িয়ে পড়ায় আদালয়ের নির্দেশে তাঁকে প্রার্থী করা যায়নি। দু’দিন আগে, তৃণমূলের সেই ‘বেচারা’ নেতা অবশ্য দলনেত্রীর ঢালাও শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন। রেয়াত করেননি বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকেও। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়েও ‘চার্জশিট’ ধরিয়ে এসেছেন সূর্যবাবুকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৬
Share:

আকুল মমতা। কান্দির মোহনবাগান মাঠে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি: গৌতম প্রামাণিক

লোহা চুরির মামলায় জড়িয়ে পড়ায় আদালয়ের নির্দেশে তাঁকে প্রার্থী করা যায়নি। দু’দিন আগে, তৃণমূলের সেই ‘বেচারা’ নেতা অবশ্য দলনেত্রীর ঢালাও শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন। রেয়াত করেননি বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকেও। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়েও ‘চার্জশিট’ ধরিয়ে এসেছেন সূর্যবাবুকে। এমনকী আসানসোলের সভা থেকে খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল বিজেপি’কে ‘ভয়ানক জালি পার্টি’ বলতেও কসুর করেননি তিনি।

Advertisement

শনিবার, সেই তৃণমূলনেত্রীই নদিয়ার করিমপুরের সভায় সুর নামিয়ে ফেলেছেন অনেকটা নীচে। বলছেন, ‘‘আঠারো বছর দল গড়েছি, কোনও দিন তো আমাকে জেতাননি। এ বার অন্তত ভোটটা দিন।’’ মাঝে মধ্যে পারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়া সুরে বিরোধীদের ভর্ৎসনা করলেও পরক্ষণেই নীচু লয়ে বেঁধে ফেলেছেন নিজেকে। পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের পরের দু’টি সভাতেও। জলঙ্গি কিংবা বড়ঞা— দু’টি জায়গাতেই খর রোদ্দুরের জনসভায় তৃণমূলনেত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে— ‘‘পছন্দ না হলে ফেলে দেবেন, তবে এক বার তো ভোটটা দিয়ে দেখুন, এই এলাকা থেকেই শুরু হবে জেলার উন্নয়ন, কথা দিচ্ছি।’’

যা শুনে মুর্শিদাবাদের এক পরিচিত জেলা নেতা বলছেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে পাল্লা দেওয়া দুষ্কর, কখন যে গলা চড়াবেন আর কখন যে বাস্তবিকই মাটির মানুষ, বোঝা দায়!’’

Advertisement

তবে দলীয় সূত্রে খবর, আসন্ন নির্বাচনে মমতার পাখির চোখ, জোট বিরোধীতা। আর তা করতে গিয়েই যেখানে মনে করছেন, গলা চড়ালে বিরোধীদের অস্বস্তিতে ফেলা যাবে, সেখানে তাঁর বক্তব্যে থাকছে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি। নেত্রীর ঘনিষ্ঠেরা জানাচ্ছেন, সুরটা বদলে দিচ্ছেন সেই সব এলাকায়, যেখানে বিরোধীদের প্রভাব শুধু বেশিই নয়, দলীয় প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা নিয়েও সংশয় রয়েছে তাঁর। তাই সেই সব কেন্দ্রে প্রচারে গিয়েও সুর বিশেষ চড়াচ্ছেন না দলনেত্রী।

ঠিক চার দিন আগে, মুর্শিদাবাদে এসেও সাগরদিঘি থেকে ডোমকল— সর্বত্রই এই ‘বিনীত’ মমতাকেই দেখেছিল জনতা। যে নেত্রী নিজের ‘কাজের’ বহরর দেন— চারশো বছরেও কেউ করতে পারবে না বলে,, উড়ালপুল ভেঙে পড়লেও যিনি নির্ধ্বিদায় পুরনো বাম আমলের দিকে আঙুল তুলতে পারেন সেই মমতাকেই কিন্তু আবার কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে এসে হাত জোড় করে চেয়ে নেন ভোট। বলেন, ‘‘এখানে পঞ্চায়েতে জেতাননি আপনারা, পুরসভাতেও ভোট দেননি। বিধানসবায় একটি মাত্র আসনে জিতিয়ে ছিলেন। তবুও এখানে (মুর্শিদাবাদ) বারবারহ এসেছি। উন্নয়নে কার্পণ্য করিনি।’’ বিরোধী কংগ্রেসের খাসতালুকে এ দিনও তাঁকে সে ভাবেই ভোট-যাচ্ঞা করতে দেখা গিয়েছে।

করিমপুরের সভায় যেমন স্থানীয় রেগুলেটেড ময়দানে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এত মানুষ প্রখর রোদে বসে আছেন, আশা করি এ বার করিমপুরে আপনারা পরিবর্তন আনবেন।’’ তিনি ধরিয়ে দিচ্ছেন, চল্লিশ বছর সিপিএম করিমপুরে আছে, এ বার তৃণমূলকে জিতিয়ে ‘ওদের’ ধুয়েমুছে সাফ করে দেওয়ার মরিয়া আবেদন তাঁর। আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন,, ‘‘মহুয়াকে জেতান, করিমপুরের উন্নয়ন আমি দেখব।’’

তবে, তাঁর নিজের সাফল্য তুলে ধরার পুরনো ‘মোডে’ ফিরে যেতেও সময় নিচ্ছেন না। আর সেই উন্নয়নের জোয়ার হবে এমন যা ‘ছানি চোখেও’ দেখা যাবে স্পষ্ট।

করিমপুর থেকে পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এত মানুষ এসেছে, একটা করে ভোট দিলেই অলোক (স্থানীয় তৃণূল প্রার্থী) জিতে যাবে। পরিবর্তন করবেন না এর পরেও?’’

বড়ঞার সভায় আরও বিনীত মমতা বলছেন— ‘‘যদি আপনারা মনে করেন প্রার্থী ভাল, এলাকায় ‘কান্দি) পরিবর্তন দরকার তাহল আমি শান্তনু সেনকে পাঠিয়েছি জোড়াফুল চিহ্নে ওঁকে ভোট দিন।’’

একবার চড়াই ফের আবার সুর নামিয়ে ফেলা— কেন এমন ক্ষণে ক্ষণে সুর বদল মমতার, তা নিয়ে দলে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা যাই বলুন না কেন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এ আসলে পাহাড় প্রমাণ চাপেরই পরিণাম। দলীয় নেতাদের একের পর এক দুর্নীতির মুখোশের উন্মোচন, এক সারদার রক্ষা নেই সঙ্গে দোসর আবার হালের নারদ-কাণ্ড। তার উপর নারদের গোপন ক্যামেরায় দলের বহু নেতার দলনেত্রী সম্পর্কে মন্তব্যও চাপ বাড়িয়েছে তাঁর। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন উড়ালপুরেল ভেঙে পড়া। এই চাপের উপরে বিষ ফোঁড়ার মতো চেপে বসেছে ঘাড়ের উপরে জোটের চাপ। ডোমকলের স্থানীয় এক তৃণমূলনেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন— ‘‘এরপরেও সুর না নামালে দিদি যাবেন কোথায়?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement