বাঁকুড়ার তালড্যাংরার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
কয়েক দিন আগেই তাঁর অভিযোগ ছিল, সিপিএমের হাতে শাসক দলের ৬ জন খুন হয়েছেন। আর তাঁর দলের নেতা মুকুল রায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এর পরে তৃণমূলের কেউ খুন হলে তাঁরা দেহ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে ঘেরাও করতে যাবেন। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করলেন, ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে তাঁদের দলের ৯ জন কর্মীকে সিপিএম খুন করেছে। ভোট মিটে গেলে ‘কত ধানে কত চাল’, তাঁরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবেন!
বাঁকুডার তালড্যাংরায় বুধবার সভা করতে গিয়ে সিপিএম প্রার্থী অমিয় পাত্রকে কড়া আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সূত্রেই এ দিন তিনি বলেছেন, “সিপিএমের এই গুন্ডারা আমার ৯ জন কর্মীকে খুন করেছে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর। আমি ছেড়ে কথা বলব না! খুনের বদলায় খুন করব না। কিন্তু প্রত্যেকটা ঘটনার চুলচেরা বিচার হবে। আর যারা মদত দিচ্ছে, তারাও আইনত ছাড়া পাবে না।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘নির্বাচন তো এক মাস বাদে ফুরিয়ে যাবে! আর আমরাই থাকব মাঠে। আমরাই থাকব রাস্তায়। কত ধানে কত চাল, কড়ায় গন্ডায়, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব!’’ কোথায় কবে তৃণমূলের ৯ জন কর্মী খুন হয়েছেন, তার
কোনও তালিকা অবশ্য শাসক দলের নেতারা দেননি।
তৃণমূল নেত্রীর এ দিনের হুঁশিয়ারির পরেই পাল্টা মুখ খুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। টুইটে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হয়তো ভুলে গিয়েছেন, গত তিন মাসে তৃণমূলের যত জন নিহত হয়েছেন, তাঁদের খুন করেছে তাঁর দলের লোকেরাই! মাফিয়াদের মধ্যে যেমন ‘গ্যাং ওয়ার’ চলে, এটাও তা-ই!’’ নিরাপদ থাকার জন্য তৃণমূলের কর্মীরা যাতে মানুষের জোটকে সরকার গড়তে সাহায্য করেন, সেই আবেদনও জানিয়েছেন সূর্যবাবু।
বস্তুত, বিরোধীরা মনে করছে, জোটের প্রচার যত জমে উঠছে, ততই আতঙ্কিত হয়ে হুমকির পথে যাচ্ছেন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা। পিসির মতোই মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিক বার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভোটের পরে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে সব বুঝে নিতে হবে। কলকাতা প্রেস ক্লাবে এ দিন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের প্রবন্ধ সংকলনের প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই প্রেক্ষিতেই প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘ওঁরা যদি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে দেখে নিতে পারেন, আমরাও ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করতে পারি!’’ আর কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা আইজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘পিসি-ভাইপো আতঙ্কিত! ওঁরা তো জনপ্রতিনিধি। যাঁরা ওঁদের ভোট দেবেন না, সেই জনগণকে ওঁরা হুমকি দিচ্ছেন। তার মানে জনতাকেই ওঁরা অপমান করছেন!’’