কোটশিলায় বিজেপির সভায় (বাঁ দিক থেকে) অর্জুন মুন্ডা, নিতিন গডকড়ী ও নরোত্তম মিশ্র। বুধবার। ছবি: সুজিত মাহাতো।
মঞ্চে বিজেপির দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ও অর্জুন মুন্ডা এবং মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র। তারপরেও বুধবার পুরুলিয়ার কোটশিলার জিউদারু ময়দানের সভার অনেকখানি ফাঁwকা থাকল বলে কটাক্ষ শুরু করেছেন বিরোধীরা।
পুলিশের হিসেবে ওই ময়দানে লোক ধরে কম বেশি হাজার সাতেক। এ দিন সভার অনেকখানি জায়গায় চেয়ার পাতা থাকলেও বেশ কিছুক্ষণ ফাঁকা ছিল। মাঠেরও কিছুটা অংশ ভরেনি বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডুর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির কর্মী-সমর্থকরাই যে বহিরাগত নেতা, মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনতে চাইছেন না, সেটা এ দিনের সভাতেই প্রমাণিত হয়েছে।” তবে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘কোটশিলার সভায় হাজার কুড়ি লোক হয়েছিল। ওই সভায় ভিড় নিয়ে কারা কী বলছেন, সেটাকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যেই আনছি না।”
এই এলাকা জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। গত লোকসভা ভোটে এখানে কমবেশি ৩২ হাজার ভোটে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এ বার বিধানসভা ভোটের মুখে সেই এলাকায় এক জোড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ একটি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো হেভিওয়েট নেতাদের সভায় ভিড় আরও বেশি হওয়া প্রত্যাশিত ছিল বলে কর্মীদের একাংশকে বলতে শোনা গিয়েছে।
এ দিনের সভা ছিল মূলত বিজেপির পরিবর্তন যাত্রা কর্মসূচির রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে। বলরামপুর বিধানসভা থেকে পরিবর্তন যাত্রার রথ বাঘমুণ্ডি, ঝালদা হয়ে ঢোকে জয়পুর বিধানসভার কোটশিলায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পরিবর্তন যাত্রা ঘিরেও বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ভিড় বা উচ্ছ্বাস এ দিন চোখে পড়েনি।
কোটশিলার ডুরগুমোড়, হাসপাতাল মোড়, ঝালদার হাটতলামোড়ে বিজেপির পতাকা হাতে কিছু কর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে রথ দেখতে রাস্তার পাশে সার দিয়ে লোকজনকে দেখা যায়নি।
জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিবর্তন যাত্রার রথকে ঘিরে পুরুলিয়ায় প্রথম থেকেই সে অর্থে বিশেষ উচ্ছ্বাস চোখে পড়ছে না। রবিবার রঘুনাথপুর বিধানসভার নিতুড়িয়া ব্লকে প্রথম জেলায় রথ ঢোকে। সেখানে ও রঘুনাথপুর শহরেও পরিবর্তন যাত্রায় বিজেপির শ’তিনেক কর্মী-সমর্থক শামিল হয়েছিলেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতির কটাক্ষ, ‘‘মানুষ রাজ্যে আদৌও পরিবর্তন চাইছেন না বলেই বিজেপির পরিবর্তন যাত্রা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।”
সভায় অবশ্য কেন্দ্রীয় সড়ক ও ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ী পরিসংখ্যান তুলে ধরে পুরুলিয়ার উন্নয়নে দিল্লি কী করেছে, তা তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর দফতর ইতিমধ্যেই ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কের কাজ সম্পন্ন করেছে। পুরুলিয়া থেকে চান্ডিল পর্যন্ত ৭০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ ও আমূল সংস্কারের কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
পুরুলিয়া শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য তাঁর দফতর ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের উপকন্ঠে চার লেনের বাইপাস তৈরিতে হাত দিচ্ছে দাবি করে গডকড়ী বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসের মধ্যে ওই বাইপাস তৈরি শুরু হয়ে যাবে। এই সব রাস্তা তৈরি হলে পুরুলিয়ার সঙ্গে ঝাড়খণ্ড-সহ অন্য রাজ্যের যোগাযোগ আরও মসৃন হবে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ব্যবসায়িক উন্নতি হবে পুরুলিয়ার। ডবল ইঞ্জিন দিয়ে বাংলা চললে গত পঞ্চাশ বছরে এ রাজ্যে যা হয়নি, সেই উন্নয়ন আগামী পাঁচ বছরে করা সম্ভব হবে।”