প্রার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে অসন্তোষ। মগরাহাট পশ্চিমে, নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থীপদ নিয়ে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ এ বার পাথরপ্রতিমায়।
জেলা নেতৃত্বের একটি সূত্র জানাচ্ছে, স্থানীয় দাবি না মেনেই অন্য এক প্রার্থীকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রদেশ নেতৃত্বকে সে কথা জানাচ্ছেন তাঁরা। কংগ্রেসের অন্দরের এই সমস্যায় জোট শরিক সিপিএমও বিব্রত। ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে বৈঠকেও বসেছে বামেরা।
জেলা কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নিচুতলার সঙ্গে আলোচনার পরে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কাকদ্বীপের বাসিন্দা কৌস্তভ রাউতকে প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি পাথরপ্রতিমার কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিলেন না।
প্রার্থী পদ নিয়ে ডানপন্থী দলগুলির মধ্যে জটিলতা কোনও নতুন ঘটনা নয়। শাসক দল তৃণমূলের ক্ষেত্রেও এ বার কিছু আসন নিয়ে এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু আপাতত হতাশা দানা বেঁধেছে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে। প্রচারে গা ঘামাতে চাইছেন না অনেকেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অর্ণব রায় বলেন, ‘‘দলের সর্বোচ্চ স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার তো বিরোধিতা করতে পারি না। তবে ইতিমধ্যেই প্রচুর ফোন পাচ্ছি। প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে একবার আলোচনা করব।’’ জেলা কংগ্রেস সূত্রের খবর, কৌস্তভবাবু বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতেন। কাকদ্বীপে তাঁর কিছুটা লোকবল থাকলেও পাথরপ্রতিমায় তেমন পরিচিতি নেই বলে দাবি করছেন পাথরপ্রতিমার ব্লক কংগ্রেস নেতারাই।
এক নেতার কথায়, ‘‘দলের নেতাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি প্রতিবাদ করা যায় না। তবে ওই প্রার্থীকে নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাঁকে না বদলালে দলের কাউকে ভোটের কাজে নামানো যাবে না।’’
প্রার্থীও কিঞ্চিত বিচলিত। বললেন, ‘‘আমার নিজস্ব কিছুটা সংগঠন পাথরপ্রতিমায় রয়েছে। তবে তা দিয়ে তো আর ভোট পার করা সম্ভব নয়। কংগ্রেসের বাকি নেতা এবং বামেদের সমর্থন প্রয়োজন। সে জন্য আমি সকলের কাছে বিনীত ভাবে আবেদন করব।’’ ঢিমতালে হলেও প্রচার শুরু করেছেন তিনি।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পাথরপ্রতিমা জোনাল কমিটি জরুরি বৈঠকে বসেছেন। তাতে পৌরহিত্য করেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রায়দিঘির প্রার্থী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি পরে বলেন, ‘‘আমরা তো কংগ্রসকে ওই আসন ছেড়ে দিয়েছি। এখন শুনছি, প্রার্থীকে নিয়ে চলতে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদেরই আপত্তি রয়েছে। তা হলে কংগ্রেসকেই দায়িত্ব নিতে হবে, ওই প্রার্থীকে বদলে দেওয়ার।’’ জেলা কংগ্রেস নেতাদের তরফেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে। কিন্তু তাতে কিছু সমাধানসূত্র কিছু মেলেনি।
অন্য দিকে, জয়নগরের প্রার্থীকে নিয়েও অসন্তোষ আছে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে।
তাপস বৈদ্য নামে স্থানীয় এক শিক্ষককে কংগ্রেস এ বার টিকিট দিয়েছে এই কেন্দ্রে। তাঁকে মেনে নিতে রাজি নয় জয়নগরের টাউন কংগ্রেস। শনিবার সকালে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রার্থী নির্বাচন কমিটির সদস্য সোমেন মিত্র এবং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অর্ণব রায়কে জয়নগর টাউন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রার্থী বদলের দাবিতে শনিবার এলাকায় মিছিলও হয়েছে। তাপসবাবু বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে কারও ক্ষোভ থাকতে পারে। আমি কংগ্রেস পরিবারের ছেলে। স্কুল-কলেজে কংগ্রেসই করেছি। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাকে প্রার্থী করেছেন। এর বাইরে আর কী বলতে পারি!’’
পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস নেতা সুজিত সরখেল অবশ্য বলেন, ‘‘নেতৃত্ব যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁকে আমরা চিনিই না। ওই প্রার্থী নিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। প্রার্থী বদলের দাবি জানানো হয়েছে। এমনকী, কংগ্রেস নেতা সুজিত পাটোয়ারিকে প্রার্থী করার আবেদন জানিয়েছি।’’ ঘটনাচক্রে, মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রেও প্রার্থী বদলের দাবি উঠেছে কংগ্রেসের অন্দরে।
অর্ণববাবু বলেন, ‘‘প্রার্থী বদলের দাবি নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি শুনেছি। তবে শীর্ষ নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা সকলকে মেনে নেওয়া উচিত বলে মনে করি।’’