বিরোধী তালুকে জোটকে বিঁধলেন অভিষেক-মুকুল

বিরোধীদের দুই খাসতালুকে ঘাসফুল ফোটাতে প্রচারসভার আয়োজন হয়েছিল। মঞ্চে উপস্থিত যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। প্রত্যাশিত ভাবেই দু’জনের বক্তব্যের নিশানায় ফিরে ফিরে এল বাম-কংগ্রেস জোট।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

পিংলা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৩:০০
Share:

জনতার মাঝে। গোপালির হেলিপ্যাডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — রামপ্রসাদ সাউ

বিরোধীদের দুই খাসতালুকে ঘাসফুল ফোটাতে প্রচারসভার আয়োজন হয়েছিল। মঞ্চে উপস্থিত যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। প্রত্যাশিত ভাবেই দু’জনের বক্তব্যের নিশানায় ফিরে ফিরে এল বাম-কংগ্রেস জোট।

Advertisement

সোমবার সভা দু’টি ছিল পিংলা ও খড়্গপুর (গ্রামীণ) বিধানসভা কেন্দ্রে। দু’টি আসনেই গত বার জিতেছিল বামেরা। তাই এ বার তৃণমূল জোরদার প্রচারে নেমেছে। এ দিন পিংলার দুজিপুর ও খড়্গপুরের গোপালিতে সভা করেন অভিষেক ও মুকুল রায়। দুজিপুরের সভা ছিল পিংলার প্রার্থী সৌমেন মহপাত্রের সমর্থনে। আর গোপালি সভাটি হয় খড়্গপুরের প্রার্থী দীনেন রায় ও নারায়ণগড়ের প্রার্থী প্রদ্যোৎ ঘোষের সমর্থনে। দু’টি সভাতেই এ দিন বাম-কংগ্রেস জোটকে আক্রমণ করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “কংগ্রেস ও সিপিএম একসঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ভোট দেওয়া দূরের কথা, ওঁদের মুখও দেখবেন না।” মুকুল রায়ও জোট নিয়ে নানা সমালোচনা করেন। মনে করিয়ে দেন কংগ্রেস কর্মীদের খুন হওয়া দিনগুলি। তাঁর কথায়, “এই সিপিএমের হাতে কংগ্রেস কর্মীরা খুন হয়েছিল। মানসবাবু আপনার লজ্জা হয় না ওঁদের সঙ্গে হাত মেলাতে।” মমতার সততার প্রসঙ্গ টেনে ভোট চাইতেও শোনা যায় অভিষেককে।

এ দিনের সভা দু’টিতে মাঠে অবশ্য প্রত্যাশিত ভিড় হয়নি। দুজিপুরের তেগেড়িয়ার মাঠে হাজার তিনেক লোক হলেও সামিয়ানার বাইরে লোক দেখা যায়নি। আর গোপালিতে লোক হয়েছে তারও কম। তবে দু’টি মাঠেই ১০-১২ হাজার লোক ধরে।

Advertisement

কেন আশানুরূপ ভিড় হল না?

স্থানীয় সূত্রে খবর, গোপালি ও দুজিপুর সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। গত বিধানসভা নির্বাচনে তো বটেই, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও গোপালি ও দুজিপুরে জিতেছিল সিপিএম। সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি, বর্তমানে বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের বাড়ি দুজিপুরেই। আর গোপালিতে এখনও সিপিএমের প্রভাব যথেষ্ট। মূলত এই কারণে তৃণমূলের সভা ভরেনি বলে জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনুমান। তার উপরে চড়া রোদে দূরের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই আসেননি তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা। উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের বিষয়টিও। পিংলায় এ বার জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতির প্রার্থী হবেন বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু দল এখানে প্রার্থী করেছে বিদায়ী মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে। ফলে, স্থানীয় কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। খড়্গপুর কেন্দ্রের প্রার্থী দীনেন রায়কে নিয়েও দলে ক্ষোভ রয়েছে। কারণ, এখানে টিকিট পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন খড়্গপুর-১ ব্লকের নেতা গোপাল খাটুয়া। এই কেন্দ্রে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা শেখ আনোয়ার নির্দল হিসেবে মনোনয়নও দিয়েছেন। এই সব কিছুর সমাপতনই মাঠ না ভরার কারণ বলে মনে করছেন তৃণমূলেরই একাংশ।

লোক না হওয়ায় তৃণমূল নেতারা যে অস্বস্তিতে পড়েছেন, এ দিন বোঝা গিয়েছে তা-ও। গোপালিতে সভা শেষে মঞ্চেই দীনেনবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ৩১ মার্চ সভা করবেন। আজ যাঁরা এসেছেন, তাঁরা যাতে সে দিন পাঁচ জন করে লোক নিয়ে আসেন, সেই আবেদনও জানান প্রার্থী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবু।

পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে অবশ্য দীনেনবাবুর মন্তব্য, “যে লোক হয়েছিল তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এর আগে কোনও সভায় এটুকুও ভিড় হয়নি। এমনকী সিপিএমও কোনওদিন এত লোক আনতে পারেনি।” পিংলার দুজিপুরের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিষেকও দাবি করেন, “অনেকে এই রোদ উপেক্ষা করে এসেছেন। সভায় কমপক্ষে ১২-১৩ হাজার মানুষ উপস্থিত আছেন। সকলে ১০টি করে ভোটের দায়িত্ব নিন। ১০ হাজার লোক যদি ১০টি ভোটের দায়িত্ব নেন তবে এই পিংলা বিধানসভায় ৫০ হাজার ভোটে সিপিএম হারবে।” তিনি একই কথা বলেছেন খড়্গপুরের গোপালির সভামঞ্চেও। সেখানে অবশ্য অভিষেক ৮ হাজার লোক হয়েছে বলে দাবি করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement