প্রতীকী ছবি।
অতিমারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদে এ বার বুথের সংখ্যা অনেক বাড়ছে। সেই সূত্রে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি পর্বে বাস ও বাঁশের কদরও বাড়ছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
এ বার বুথ হিসেবে দেখা যেতে পারে বড় সরকারি বাসকেও। বাসের এক দিকের গেট দিয়ে উঠে ভোট দিয়ে অন্য গেট দিয়ে নেমে আসবেন ভোটার। অতিরিক্ত বুথের চাহিদা মেটাতে বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেল বা মঞ্চ তৈরির ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বুথের সংখ্যা বাড়লেও কমিশনের স্থির করে দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী সর্বত্র ভোটকেন্দ্রের জন্য স্থায়ী ভবন পেতে সমস্যায় পড়ছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। তাই বিকল্প হিসেবে বাস ও বাঁশের ভাবনা ঘুরছে কমিশন-কর্তাদের মাথায়।
প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, বাসে বুথ তৈরির ভাবনা বেশ অভিনব। অতীতে এমন ভাবে বাসকে বুথের রূপ দেওয়ার জন্য কমিশনকে ভাবনাচিন্তা করতে হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই ভাবনা বাস্তবায়িত করতে হলে বড় বাসের অন্দরসজ্জা পরিবর্তন করা হবে। বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় কোনও পরিকাঠামো গড়ার সুযোগ না-থাকলে সেখানে ওই ‘ভ্রাম্যমাণ’ বুথ নিয়ে গিয়ে ভোটগ্রহণ করা হবে। এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য সব দিক খতিয়ে দেখছে মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতর। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও পর্যন্ত ভাবনাচিন্তার স্তরে রয়েছে। পরিবহণ দফতরের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনাও চলছে।’’
পশ্চিমবঙ্গে আগে বুথের সংখ্যা ছিল ৭৮,৯০৩। করোনার জন্য এ বার বেড়ে হবে ১,০১,৭৯০। অর্থাৎ ২২,৮৮৭টি বাড়তি বুথ চাই। কমিশন সূত্রের খবর, বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনায় অতিরিক্ত স্থায়ী বুথের পরিকাঠামো পেতে সমস্যা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আমপানের ধাক্কায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু পরিকাঠামো। তাই অস্থায়ী ভাবে বাঁশের মঞ্চেই ভোটকেন্দ্র তৈরি করতে চাইছে কমিশন। কর্তাদের হিসেব, অতিরিক্ত ২২,৮৮৭টির অন্তত ১৫% (কমবেশি সাড়ে তিন হাজার) বুথের জন্য এমন অস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে হতে পারে। কিন্তু কমিশনের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী এক-একটি মঞ্চ হবে ২০ বর্গমিটার। সে-ক্ষেত্রে জায়গার সমস্যা তো রয়েছেই, আছে মঞ্চের উপকরণ জোগাড়ের চিন্তাও। এক কর্তা বলেন, ‘‘যে-ক’দফায় ভোট হবে, তার বেশির ভাগই পড়তে পারে এপ্রিলে। ওই সময় বিয়ে এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানও থাকতে পারে। প্যান্ডেলের পর্যাপ্ত উপকরণ ডেকরেটরদের কাছে থাকবে কি না, সেটাই চিন্তার।’’
পোস্টাল ব্যালটের প্রস্তুতিও শুরু করতে হয়েছে কমিশনকে। তাদের হিসেবে ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে অন্তত ১১ লক্ষ মানুষ রয়েছেন বাংলায়। শারীরিক ভাবে অক্ষম কমবেশি চার লক্ষ মানুষও এ বার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে চাইতে পারেন। তাই গোটা পদ্ধতি এবং ভোটকর্মীর দল গঠনে বাড়তি সময় দিতে হচ্ছে জেলাকর্তাদের। কমিশন সূত্রের খবর, ভোট ঘোষণার পরে বুথ স্তরের অফিসারেরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের আবেদনপত্র দিয়ে আসবেন। ভোটের নির্দিষ্ট তারিখের সাত দিন আগে ভোটকর্মীরা ইচ্ছুক ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নেবেন। চাইলে ভোটকর্মীর দলে প্রতিনিধি রাখতে পারে রাজনৈতিক দলগুলিও। গোটা প্রক্রিয়া ভিডিয়ো ক্যামেরায় বন্দি করবে কমিশন।