আসানসোলের সভায় প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।
নারদ হুলের পর ভাঙল উড়ালপুল! একটায় পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে টাকা নেওয়া, অন্যটায় সিন্ডিকেটের জুলুম। দুর্নীতির ছায়া যখন শাসক দলের ঘাড়ে চেপে বসেছে, তখন বাংলায় প্রচারে এসে দিদিকে ‘হামেশা’-র জন্য ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূল নেত্রীকে তীব্র খোঁচা দিয়ে বললেন, দুর্নীতির সঙ্গে ‘অ্যাডজাস্ট করে নিয়েছেন দিদি’! মোদীর দাবি, ‘‘উড়ালপুল ভেঙে ভগবান বঙ্গবাসীর জন্য বার্তা দিয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, আজ পুল ভেঙেছে, কাল রাজ্য ভেঙে পড়বে!’’
মোদী-মমতা সেটিং নিয়ে বিরোধী শিবির যখন সরব, তখনই গত মাসের ২৮ তারিখ রাজ্যে প্রথম প্রচারে এসেছিলেন মোদী। নারদ-পর্ব তখন টাটকা। বান্ডিল বান্ডিল টাকা নেওয়ার দৃশ্যে টিভির পর্দা তেতে রয়েছে। সে দিন সারদা থেকে ‘নারদা’ নিয়ে মমতাকে বিঁধেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার পর গত বুধবারই প্রচারে এসে মমতার বিরুদ্ধে প্রায় কিছুই বলেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ফলে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশ নিয়ে অভিযোগের তির জোরদার হওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। বিজেপির পক্ষে বিড়ম্বনার সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজটি এ দিন করলেন মোদী। বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভাঙা এবং তার জেরে সিন্ডিকেট-রাজের ছবিটা বেআব্রু হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে হাতিয়ার করে গত বারের তুলনায় বেশ কয়েক পর্দা সুর চড়িয়ে সমালোচনা করলেন মমতার।
আসানসোলের পোলো ময়দানের জনসভায় মোদী বলেন, ‘‘এখানে সিন্ডিকেট চলছে! চিট ফান্ডের সিন্ডিকেট, ভ্রষ্টাচারের সিন্ডিকেট, কয়লা লুটেরাদের সিন্ডিকেট! বাম জমানায় এই লুঠ শুরু হয়েছে। দিদি চালিয়ে যাচ্ছেন!’’ এর আগে সকালে উত্তরবঙ্গের বীরপাড়ায় সভা করেন মোদী। সেখানেও চন্দনকাঠ চুরির সিন্ডিকেটের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশের অভিযোগ করেন। আসানসোলে ফের সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, দিদি দুর্নীতি দেখলে চেয়ার ছুড়ে চলে যেতেন। সেই দিদির এখন কী হল?’’ উড়ালপুল ভাঙা নিয়ে ‘দিদির রাজনীতির’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের প্রাণ বাঁচানোর আগে নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দিদি! কারণ, টিএমসি আর মা মাটি মানুষের নেই। এখন টি মানে টেরর, এম মানে মওত, সি মানে করাপশন! মওত আর মানির কারবার করছে তৃণমূল!’’ গলা তুলে অভিযোগ করেছেন, দিদির দল ‘বাংলার মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে’। পরক্ষণেই গলা খাদে নামিয়ে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘উড়ালপুল ভেঙে না পড়লে দিদি গিয়ে ফিতে কাটতেন। তখন বামেদের কৃতিত্ব দিতেন না! বলতেন আমিই করেছি।’’ জনতার কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘এমন শাসককে হামেশা হামেশার মতো ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত কি না?’’
আরও পড়ুন...
ঘাসফুলের গড়ে হুঙ্কার সেলিমের
মোদীর এহেন চাঁচাছোলা সমালোচনাকে অবশ্য ‘ফাঁপা আওয়াজ’ হিসেবেই দেখছেন বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, ‘‘দিদির দুর্নীতি দমন করতে প্রধানমন্ত্রী যদি এতটাই আন্তরিক, তা হলে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত হঠাৎ কেন থমকে গেল? কেনই বা নারদ নিয়ে কেন্দ্র কোনও তদন্তের নির্দেশ দিল না? মানুষ দিদি-মোদীর আঁতাতটা জেনে গেছে!’’ একই সুর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও।
মোদী অবশ্য কৌশলে মমতার সঙ্গে জোট আসলে কংগ্রেসের, এমন কথা তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন। বীরপাড়ার সভায় তিনি বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যদি দিদিকে ডাকি, উনি যান না। কিন্তু দিল্লি গেলে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেন, আশীর্বাদ নেন। হাসি মুখে ছবিও তোলেন। এখানে কংগ্রেস-বাম জোট। দিল্লিতে অন্য রকম। বুঝতে পারছেন তো?’’
কিন্তু বোঝার পথ মেরে দিয়েছেন মমতা নিজেই। লোকসভা ভোটের সময় মোদীর কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে ভরার হুমকি দিলেও এ দিন বিন্দুমাত্র পাল্টা আক্রমণে যাননি তিনি। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘এত কথা না বলে বন্যাত্রাণে যে টাকা চেয়েছিলাম, সেটা দিন।’’