মেদিনীপুর মেডিক্যালে জখম কংগ্রেস কর্মী সন্ধ্যা জানা। নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটেছে দু’সপ্তাহ আগে। তবু রাজনীতির চাপানউতোরে সবংয়ের মাটি এখনও উত্তপ্ত। শুক্রবার রাতে মোহাড় পঞ্চায়েতের দুবরাজপুরে কয়েকজন সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এঁদের মধ্যে কয়েকজন ঘরছাড়া সদ্য বাড়ি ফিরেছিলেন, কয়েকজন আবার এলাকায় নেই।
১১ এপ্রিল ভোটের আগে থেকেই তেতে রয়েছে সবং। দুবরাজপুরে গত ৮ এপ্রিল রাতে খুন হন তৃণমূলের বুথ সভাপতি জয়দেব জানা। অভিযোগ ওঠে বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনকী কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া, ব্লক সভাপতি অমল পণ্ডা, ব্লক সাধারণ সম্পাদক আবু কালাম বক্সের নামও ২২ জন অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে। ঘটনায় ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের ধরার দাবিতেই শুক্রবার সন্ধ্যায় দুবরাজপুরে মিছিল করে তৃণমূল। তারপর রাতে তৃণমূলের লোকজন সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।
মোহাড়েই মহিলা কংগ্রেস কর্মী সন্ধ্যা জানাকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকালে স্বামী সুভাষ জানা বাড়িতে ছিলেন না। তখনই কয়েকজন তৃণমূল কর্মী এসে তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালের শয্যায় শুয়ে সন্ধ্যাদেবী বলেন, “কংগ্রেস করি। এটাই আমার অপরাধ।”বিরোধীদের মতে, হার নিশ্চিত জেনেই তৃণমূল এই সব করছে। কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া বলেন, “যাঁরা ভয় ভেঙে ভোট দিয়েছে তাদের উপরই তৃণমূল অত্যাচার চালাচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে, মারধর করছে। পুলিশ নীরব দর্শক। পুলিশ সুপার থেকে কমিশন সর্বত্র জানিয়েছি। তবে সুফল পাচ্ছি না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সবংয়ের দুবরাজপুরে বরাবর বামেদের দাপট রয়েছে। জয়দেব জানা খুনের পর থেকে এলাকার জনা কুড়ি বাম কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া রয়েছেন। ঘরছাড়াদের মধ্যে রয়েছেন অসিত সামন্ত, নিরঞ্জন করণ, কালীপদ মান্না, জয়দেব মণ্ডল, মহাদেব করণ প্রমুখ। দিন তিনেক আগে সবং থানায় এক সর্বদল বৈঠকে বামেদের পক্ষ থেকে ওই ঘরছাড়াদের ফেরানোর দাবি জানানো হয়। পুলিশ আশ্বাসও দেয়। তবে বেশিরভাগ ঘরছাড়াই ফিরতে পারেননি। জানা গিয়েছে, দু’দিন আগে বাড়িতে ফিরেছিলেন নিরঞ্জন করণ। শুক্রবার তিনি ধান ঝাড়াইয়ের কাজও করেছিলেন। সিপিএমের অভিযোগ, রাতে তৃণমূলের লোকেরা নিরঞ্জনের বাড়িতে চড়াও হয়ে ধান ঝাড়াইয়ের মেশিন ভাঙচুর করে। বাণেশ্বর করণ, গৌতম করণ, কেদার জানার বাড়িতেও ভাঙচুর চলে বলে অভিযোগ। জয়দেব-খুনে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন বাণেশ্বর। অভিযুক্ত গৌতম আবার এলাকাছাড়া।
নিরঞ্জনের স্ত্রী মাধবীদেবী শনিবার বলেন, ‘‘পুলিশ আশ্বাস দেওয়ার পরেও এমন ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত।’’ ঘটনার বিষয়ে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক চন্দন গুছাইতেরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশের আশ্বাস পেয়ে কয়েকজন বাড়ি ফিরতেই তৃণমূলের লোকেরা হামলা চালায়।’’
শাসক দল যা-ই দাবি করুক না কেন, ভোটের পর থেকে মোহাড়, বুড়াল, দণ্ডরা-সহ সবংয়ের নানা এলাকায় অশান্তি চলছে। ১২ এপ্রিল বুড়ালের উচিতপুরে সিপিএম এজেন্টের বাড়িতে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে। ১৮ এপ্রিল দণ্ডরায় বোমাবাজির অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। এ বার দুবরাজপুরে হামলার অভিযোগ। সবেতেই অভিযুক্ত শাসক দল।
কিন্তু ভোটের পরেও কেন সন্ত্রাস?
জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সবং বরাবর কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’। দীর্ঘ দিনের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার জয় এ বারও নিশ্চিত বলেই দাবি করছে দল। এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মী জয়দেব জানার খুনকে হাতিয়ার করে এলাকা সরগরম করছে তৃণমূল। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অমলেশ বসু বলেন, “তৃণমূল একটা সন্ত্রাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করে রাখতে চাইছে। কারণ সবংয়ে কংগ্রেস জিতবে।’’ যদিও দুবরাজপুরে হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে তৃণমূল। দলের স্থানীয় নেতা অমূল্য মাইতি বলেন, “মানস ভুঁইয়া-সহ পলাতক অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে আমাদের মিছিল হয়েছিল এটা ঠিক। তবে কোনও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, “আমাদের কর্মী খুনে মানস ভুঁইয়াদের গ্রেফতারের দাবিতে ব্লকের সর্বত্র মিছিল করব।’’
সবংয়ে যখন বারবার অশান্তি হচ্ছে, তখন কেন মিছিলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “একটা মিছিল হয়েছিল বলে শুনেছি। আমরা এখন মিছিল করতে নিষেধ করেছি। সর্বদল বৈঠক হয়েছে। এর পরেও কেন মিছিল হয়েছে সে বিষয়ে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলব।’’