তৃণমূল নেত্রীর কপ্টার জেলা ছেড়েছে বেলা একটার কিছু পরে। পুলিশ-প্রশাসন থেকে টেলিভিশন চ্যানেল, ততক্ষণে সর্বত্র খবর ছড়িয়েছে, কলকাতায় উড়ালপুল দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি সভা বাতিল করে চলে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে একটি বার মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে যে মানুষগুলো চড়া রোদেও হা-পিত্যেশ করে বসেছিলেন, তাঁদের কানে কথাটা পৌঁছতে সেই বিকেল গড়িয়ে গেল।
এ দিন জেলায় তিনটি সভা ছিল মমতার। দাঁতন, কেশিয়াড়ি ও খড়্গপুর গ্রামীণে। তিন জায়গাতেই সকাল থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ভিড় জমিয়েছিলেন। কিন্তু মমতা যে আসছেন না, সে কথাটা তাঁরা জানতে পারেন বিকেল চারটে নাগাদ। ততক্ষণে চড়া রোদে বসে থাকা কর্মী-সমর্থকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। অনেকেরই ক্ষোভ, ‘‘নেত্রী যে আসতে পারছেন না, সেই কথাটা আগে জানাতে কী ছিল!’’
তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, ‘‘এত বড় দুর্ঘটনা, তাই দিদি ছুটে গিয়েছেন। যখনই জেনেছি নেত্রী আজ আসতে পারবেন না, তখনই সবাইকে জানিয়েছি।” দাঁতন কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম প্রধানের আবার ব্যাখ্যা, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীদের তরফে বারবার বলা হচ্ছিল সভা বাতিলের কথা নেত্রী বলেননি। যখনই সেই সিদ্ধান্ত জেনেছি জনতাকে বলেছি। মানুষের ভোগান্তির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, আজ, শুক্রবার মোহনপুর ও কেশিয়াড়িতে নির্দিষ্ট স্থানেই মমতার সভা হবে। যদিও খড়্গপুর গ্রামীণের সভাটি হবে কিনা, নিশ্চিত নয়।
বেলা সাড়ে বারোটায় মমতার প্রথম সভার কথা ছিল দাঁতন বিধানসভার মোহনপুরে। স্বাধীনতার পর প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রীর আসার কথা ছিল এলাকায়। ১৯৬৩-তে বাংলা কংগ্রেসের নেতা অজয় মুখোপাধ্যায় যখন এখানে সভা করেছিলেন, তখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী নন। ১৯৯২-এ টর্নেডো বিধ্বস্ত দাঁতন-মোহনপুরের কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, তবে কপ্টারে। তার পর কোনও মুখ্যমন্ত্রী আসেননি। তাই মমতার সভা ঘিরে এলাকাবাসীর আবেগ ছিল। সকাল দশটা থেকে দূর দূরান্তের মানুষ আসতে শুরু করেন। বারোটার আগেই হাজার তিরিশেকের জমায়েত হয়ে যায়।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে আসছেন না, সে কথাটা জানতে বিকেল চারটে বেজে যায়। অভিনেত্রী সাংসদ মুনমুন সেন মঞ্চে উঠে বলেন, “দিদির সঙ্গে আসব বলেই ঠিক ছিল। দিদি বেরিয়েও পড়েছিলেন। তখনই দুর্ঘটনার খবরটা আসে। আর দিদি কপ্টারে কলকাতা চলে যান।’’ এই কথাটা জানাতে বিকেল গড়িয়ে যাওয়ায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই বিরক্ত। বড়বেলি গ্রামের প্রশান্ত পাত্র যেমন বলেন, “সকাল ৮টা থেকে রোদে বসে আছি। একটু আগে জানিয়ে দিলেই হত যে মমতা আসছেন না।’’
কেশিয়াড়ির দুধেবুধে গ্রামের সভাস্থলেও হতাশা ও ক্ষোভ। অনেকেই বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আসছেন না জানলে কাজ ফেলে আসতাম নাকি!’ মমতার এ দিনের সভাগুলি বাতিল হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও সংশয় ছিল। জেলার তৃণমূল নেতাদের কাছে খবর ছিল, সন্ধ্যায় ফিরে সভা করতে পারেন নেত্রী। তাই খড়্গপুর গ্রামীণের সভাস্থলে আলো লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়। সভা শুরুর সময় ছিল বিকেল তিনটে। আগেই জানা যায়, মমতা আসছেন না।
পর পর দু’দিন সভা আয়োজন নিয়ে জল্পনা চলছে জেলা তৃণমূলে। বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও। কেশিয়াড়ির সিপিএম প্রার্থী বিরাম মাণ্ডির কটাক্ষ, “একটা ফ্লেক্স বানাতে হিমশিম খাচ্ছি। আর ওরা লক্ষ লক্ষ টাকায় সভার আয়োজন করে স্থগিত রাখছে, ফের করছে। সব চিটফান্ড, নারদের টাকা! কেশিয়াড়ির তৃণমূল প্রার্থী পরেশ মুর্মুর জবাব, “দুর্ঘটনা তো কারও হাতে থাকে না। নেত্রী যখন আসবেন বলেছেন, তার আয়োজন তো করতেই হবে। এ নিয়েও কুৎসা!”