নিজস্ব চিত্র
নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে কিছু তথ্য পেয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকালে মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিআইজি কুণাল আগরওয়াল, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক বিভু গোয়েল এবং পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ বিরুলিয়া বাজারে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয় ব্লক অফিস এবং থানায় গিয়েও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এর পরে প্রাথমিক নথিপত্র দেখে প্রতিটি ঘটনার সত্যতা যাচাই করে নবান্নে রিপোর্ট পাঠাবেন তাঁরা।
নবান্ন সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের তদন্তে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তা যাচাই করার পরে তবেই রিপোর্ট দেবে প্রশাসন। যা রাজ্য পুলিশের ডিজি পি নীরজনয়ন দেখার পর পাঠাবেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে, এবং তিনি তা দেখে পাঠাবেন নির্বাচন সদনে। ওই সূত্রের দাবি, জেলা প্রশাসন যে সব তথ্য পেয়েছে, তা হল,
১) বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নন্দীগ্রামে নামার অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। তবে নন্দীগ্রামের প্রার্থী যে এর পর বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরে জনসংযোগ করবেন তা তাদের জানা ছিল না বলে দাবি প্রশাসনের। সূত্রটি দাবি করেছে, এর ফলে প্রশাসনের খাতায়, নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থীর জনসংযোগের পুরোটাই ছিল তাদের তালিকার ‘বাইরের’ কর্মসূচি। সূত্রের আরও খবর, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছিলেন, সেই হিসেবে যথাযথ পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। তবে জনসংযোগ কর্মসূচির কথা জানা থাকলে বিধি অনুযায়ী প্রশাসন ভিডিয়ো ক্যামেরা, প্রচারের ব্যয় নির্ধারণের জন্য কর্মী নিয়োগ করে। বিষয়টি জানা না থাকায় এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
২) মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে শুধুমাত্র স্পেশাল সিকিয়োরিটি উইং বা এসএসডব্লিউয়ের জওয়ান-অফিসারেরাই থাকেন। জেলা পুলিশ বা স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মীদের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যেতে দেওয়া হয় না। সূত্রের দাবি, জেলা প্রশাসন তদন্তে জেনেছে, ঘটনার দিনও মুখ্যমন্ত্রীর দুই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী এবং ডিরেক্টর (সিকিয়োরিটি) মুখ্যমন্ত্রীর সবচেয়ে কাছে ছিলেন।
৩) জেলা প্রশাসনের তদন্তে পাওয়া গিয়েছে, কাছাকাছি একটি দোকানের মাথায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছিল না। ফলে কোনও ফুটেজ পাওয়া যায়নি।
৪) বিরুলিয়া বাজারের প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, রাস্তার মাঝে থাকা পিলারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বুলেটপ্রুফ গাড়ির ধাক্কায় মমতা আহত হন।
৫) প্রশাসনিক আধিকারিকেরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, বিরুলিয়া বাজারে মূলত তৃণমূলের কর্মী- সমর্থকেরাই ছিলেন। যদি কেউ মুখ্যমন্ত্রীকে বা তাঁর গাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়ে থাকেন, তা হলে সমর্থকেরা অভিযুক্তদের ধরে ফেলতেন। এমন কোনও ব্যক্তিকে এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যদিও প্রচারসূচির ব্যাপারে তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি স্বদেশ দাস বলেন, ‘‘মনোনয়ন দাখিল করা ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে পুলিশকে অবগত করা হয়েছিল। পুলিশ ও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা সেই সব জায়গা পরিদর্শন করে এসেছিলেন। তার পরই মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন।’’
রাজ্যের দুই বিশেষ পর্যবেক্ষকের কাছেও ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, প্রশাসন এবং পর্যবেক্ষকের রিপোর্ট পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় গাফিলতির জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে কমিশন। মুখ্যসচিবও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা অধিকর্তার কাছে আলাদা রিপোর্ট চেয়েছেন।