সিপিএমের দাবিকেই কার্যত সিলমোহর দিচ্ছে পুলিশ— কামরুজ্জুমান গা ঢাকা দিয়েছে এবং তা জেলার বাইরে, দক্ষিণবঙ্গের উপকূল ঘেঁষা এক প্রান্তিক জেলায়।
ভোটের সকালে, সিপিএমের নির্বাচনী এজেন্ট তাহিদুল মণ্ডল খুনে মূল অভিযুক্ত কামরুর সেই ‘নিরাপদ আশ্রয়’ যে শাসক দলের নেতাদের ঠিক করে দেওয়া, দলীয় সূত্রে তা-ও জানা গিয়েছে। দিন কয়েক ধরেই ডোমকলের সিপিএম নেতৃত্ব এমনই দাবি করে আসছিল। বুধবার, দলের নেতাদের কথাতেও সেই সুর ধরা পড়েছে। তৃণমূলের এক জেলা নেতা আবার দাবি করছেন, ‘‘অনুব্রতর আশ্রযে বহাল তবিয়তে রয়েছে কামরু। বড়ঞা সীমানা পার হয়ে লাভপুর কিংবা নানুরের কোনও গ্রামে গোপন ঠিকানায় রয়েছে সে।’’
কিন্তু, জেলার বাইরে কোথায় রয়েছে কামরু, সে ব্যাপারে ধারনা পাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ হাত গুটিয়ে রয়েছে কেন?
জেলা পুলিশের এক কর্তা মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে, না সুতো ছাড়ছে, তা বুঝলেন কী করে, খেলা এখনও বাকি ভাই, দেখুননা কী হয়!’’
তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলার এক নেতা বলছেন, ‘‘মাথায় শাসকের হাত থাকলে তাকে আর কে রোখে, আপাতত স্থির হয়েছে আগাম জামিন নেবেন কামরু, এবং তা কলকাতা হাইকোর্ট থেকে।’’ জামিন না মিললে? সে ব্যাপারেও দলের মাথাদের সঙ্গে এক প্রস্থ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হাইকোর্টে নেতিবাচক কিছু হলে অবশ্য নিরুপায় কামরু আত্মসমর্পণের রাস্তাতেই হাঁটবে বলে জানিয়েছে দল।
বুধবার তাই গোপন ডেরে থেকে কলকাতা পাড়ি দিয়েছে কামরু। দু’এক দিনের মধ্যেই হাইকোর্টে তার জামিনের আবেদ করা হবে। সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর সঙ্গে তার অনুগামীরা কথাবার্তাও বলেছেন বলে জানা গিয়েছে। দলের জেলা নেতাদের কলকাতা যাতায়াতও বেড়েছে কী সেই সূত্রেই? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের ডোমকলের প্রার্থী সৌমিক হোসেনও এ দিন কলকাতা গিয়েছেন। তা কী ভোটের সেনাপতি কামরুর পাশে দাঁড়াতেই?
যা শুনে জাঁঝিয়ে উঠছেন সৌমিক, ‘‘কামরুর ভূত কবে ছাড়বেন বলুন তো?’’ কলকাতা থেকে ফোনে সৌমিক বলছেন, ‘‘আমি এখনও বলছি ও নিরাপরাধ। আমি কলকাতা এসেছি ঠিকই তবে এখন দেখছি যাই করি না কেন তার সঙ্গে কামরুর অনুষঙ্গ জুড়ে
দেওয়া হচ্ছে।’’
তৃণমূলের ডোমকল এলাকার এক প্রভাবশালী নেতা যা শুনে হাসছেন, ‘‘একেই বলে সময়ে হাত ধুয়ে ফেলা!’’ কামরুকে ‘বড়’ করেছেন যাঁরা তাঁদেরই চিনতে না পারা— রাজনীতিতে এ খেলা নতুন নয়। তবে ভোটের সকালে খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়া কামরুকে যে এত তাড়াতাড়ি ঝে়ড়ে ফেলবে তৃণমূল, তা দলীয় কর্মীরা ভাবতেই পারেননি।