কুরবানের বাড়িতে তৃণমূল নেতৃত্ব। রয়েছেন স্ত্রী শাবানা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
আদালতের রায়ের নথি পাওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে ‘পলায়ন’, পরে হাইকোর্টর নির্দেশে পুলিশের জালে— বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানকে নিয়ে মঙ্গলবার ‘নাটক’ দেখেছেন তমলুকবাসী। প্রশ্ন উঠেছিল, বিজেপি নেতা হওয়ার পরেও দলীয় নেতা খুনের অভিযুক্ত আনিসুরের বিরুদ্ধে মামলা তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার কেন প্রত্যাহার করতে চাইছে! সেই প্রশ্নের কিছুটা হলেও উত্তর মিলল বুধবার— আনিসুরের মুখে।
হাসপাতাল থেকে ‘পলায়ন’ মামলায় এ দিন আনিসুরকে তমলুক আদালতে তোলা হয়েছিল। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তরে আনিসুর বলেন, ‘‘রবি, নজরুল বাঙালি মনে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন বাঙালির ঘরে।’’ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে আনিসুর তৃণমূলেই ছিলেন। এ দিন আদালত চত্বরে তিনি অভিযোগ করেন যে, তাঁকে সে সময় তৃণমূল করতে দেওয়া হয়নি।
কুরবান শা হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজের বর্তমান দল বিজেপি’কেও একহাত নিয়েছেন আনিসুর। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা এতদিন চিৎকার করতেন যে, আনিসুর রহমানকে বিজেপি করার জন্য ফাঁসানো হচ্ছে, সে দিন কিন্তু আমি মুকুলবাবুর বাড়িতে ছিলাম। যে দিন ঘটনা ঘটেছে। আমি আশা করেছিলাম, বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের এই রায়কে স্বাগত জানানো হবে। আমি বিজেপি ছাড়লাম।’’ কুরবানের অভিযোগ প্রসঙ্গে অবশ্য পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি। দলের জেলা (তমলুক) নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘মহামান্য আদালতের উপরে তো আমরা নয়। আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবে, তাই মানতে হবে।’’
কুরবান হত্যাকাণ্ড মামলা প্রত্যাহার নিয়ে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপে তৃণমূলের ক্ষতিই হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি, মঙ্গলবার তমলুক আদালত চত্বরে কুরবানের স্ত্রী তথা মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শাবানা বানু খাতুনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে আনিসুরের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তাদের হাতে তৃণমূলের পতাকা ছিল বলেও অভিযোগ।
ওই জোড়া ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ উদ্যোগী হয়েছেন পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতৃত্ব। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মাইশোরায় কুরবানের বাড়িতে হাজির হন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানা এবং সহ-সভাপতি সুধাংশু আদক। দুপুরে যান পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জইদুল ইসলাম এবং পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হানিফ মহম্মদও।
শাবানা তাঁদের জানিয়ে দেন, দল বিশ্বাসঘাতকতা করছে। শাবানার কথায়, ‘‘ভোটেদলের হয়ে প্রচারে নেমেছি। আর আমার দলের সরকারই স্বামীর খুনের মামলা তুলে নিতে চাইছে। যেভাবে আনিসুরের লোকজন আক্রমণ করল, তার দায় কে নেবে?’’ সে জবাব অবশ্য ছিল না তৃণমূল নেতাদের কাছে।
ভোটের আগে তৃণমূলের প্রধান নিগ্রহের ঘটনায় এলাকায় বিরূপ প্রভাব পড়বে না তো? এ প্রসঙ্গে দীপ্তি জানা বলেন, ‘‘ঘটনা সত্যিই নিন্দনীয়। তবে আমরা পরিস্থিতি সামলে নেব।’’
শাবানার উপরে আক্রমণ এবং আদালত চত্বরে হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ই-মেলে অভিযোগ দায়ের করেছেন কুরবানের দাদা আফজল শা।