মাঠ উপচে রাস্তায় ভিড় জোটের সভায়

চেনা মাঠ। এক সময়ের লাল দুর্গ। ফের সেই মাঠেই উপচে পড়া ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতি, ভোট লুঠ থেকে শুরু করে জেলায় কৃষকদের অবস্থা— এই সমস্ত ইয়র্কারে বর্ধমানে শাসকদলের উইকেট ফেলার ডাক দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৪
Share:

মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে মধুমিতা মজুমদারের তোলা ছবি।

চেনা মাঠ। এক সময়ের লাল দুর্গ। ফের সেই মাঠেই উপচে পড়া ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতি, ভোট লুঠ থেকে শুরু করে জেলায় কৃষকদের অবস্থা— এই সমস্ত ইয়র্কারে বর্ধমানে শাসকদলের উইকেট ফেলার ডাক দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

চেনা মাঠের দখল পেতে সামনের ভিড় লক্ষ করে সূর্যকাম্তবাবুর আহ্বান, ‘‘বুথে বেহুলার বাসরঘরের মতো ছিদ্র থাকলে চলবে না।’’ জেলার গ্রামীণ এলাকায় প্রচারের প্রথম জনসভায় নেতার ব্যাট হাঁকানোয় হাততালির ঝড় শুনে জোটের নেতারাও বললেন, প্রচার শুরুর এর থেকে ভাল মঞ্চ আর হতো না।

বুধবার বিকেলে প্রথম সভাটি হয় বর্ধমান-কাটোয়া রোড লাগোয়া দেওয়ানদিঘিতে। পরের সভাটি হয় মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে।

Advertisement

মন্তেশ্বরের সভার ভিড় দেখে স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহী সিপিএম নেতৃত্ব। সভা শুরুর খানিক বাদেই কুসুমগ্রাম, বাঘাসন, বেনুর থেকে ছোট-বড় মিছিল ঢুকতে শুরু করে। এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল সিপিএমের পতাকায়। শরিক দল ও কংগ্রেসের লোকজনকেও দেখা যায়। মাঠের ভিড় উপচে পড়ে কুসুমগ্রাম-সাতগাছিয়া রোডেও। সভা ভাঙার কিছুক্ষণের মধ্যে যানজট দেখা যায়।

দেওয়ানদিঘির মাঠ ভরে জোটের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে। এখানে বক্তব্যের শুরুতেই সিপিএম সম্পাদক স্মরণ করিয়ে দেন, এই এলাকাতেই বছর খানেক আগে খুন হন দলের নেতা প্রদীপ তা ও কমল গায়েন। সেই স্মৃতি উসকে দিয়েই বুথে বুথে লড়াইয়ের পরামর্শ দেন তিনি। বহু কংগ্রেস সমর্থককেও দলীয় পতাকা হাতে বক্তব্য শুনতে দেখা যায়।

এ দিন মন্তেশ্বর ও পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে সভাটির আয়োজন করা হয়। সেখানে বুথ পাহারার কথা বলতে গিয়ে সূর্যকান্তবাবুকে মঙ্গলকাব্যে বর্ণিত ঘটনার প্রসঙ্গও নিয়ে আসতে দেখা যায়। কর্মীদের লক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘বেহুলার বাসরঘরে একটা ছিদ্র ছিল। বুথ রক্ষা করতে গিয়ে তেমন ছিদ্র রাখা চলবে না।’’ কোনও অনিয়ম দেখলে তার ছবি তুলে সরাসরি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে পাঠানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়।

দুর্নীতির প্রশ্নেও দু’টি সভাতেই সুর চড়ান তিনি। নারদ কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে, শাসকদলের এমন নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। টেট-কেলেঙ্কারি, সরকারি নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়েও সরব হতে দেখা যায় তাঁকে। প্রতি বছর এসএসসি ও পিএসসিতে নিয়োগের দাবিও জানানো হয় সভামঞ্চ থেকে।

২০১১-র জেতা আসন মন্তেশ্বরে লোকসভায় ফল তেমন ভাল হয়নি। কিন্তু এ দিনের ভিড়ের পর রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, ভিড়ের ছবি ভোট-ব্যাঙ্কে দেখা গেলে বেগ পেতে হবে শাসকদলকে। মন্তেশ্বরের এক সিপিএম নেতার দাবি, এ দিনের মন্তেশ্বরের সভায় এ দিন প্রায় হাজার আটেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বহু মানুষকে মাঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। তবে ২০১১ সালে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূল কড়া ট্যাকেলের মুখে ফেলে দিয়েছিল সিপিএমকে। ওই আসনের দিকে লক্ষ্য রেখে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দাওয়াই, ‘‘ওই আসনে গত বার আমরা জিতিনি। সেখানে এমন বল করতে হবে যাতে প্রথম বলেই উইকেট ছিটকে যায়।’’

গত বছর অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন জেলার চাষিরা। সাম্প্রতিক সময়ে বোরো চাষের জল না মেলা, ফসলের দাম না মেলা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরব হতে দেখা যায় সূর্যকান্তবাবুকে। ভোট মিটলে ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’ বুঝে নেওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সেই কথার রেশ ধরেই সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের পাল্টা, ‘‘ওঁর কথা ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব। আমরা বলছি ফুটে ফুটে, মিটারে মিটারে কিলোমিটারে কিলোমিটারে বুঝে নেব।’’ নেতার বক্তব্য শুনেই হাততালিতে ফেটে পড়েন জোটের নেতা-কর্মীদের।

বাম নেতা-কর্মীদের বক্তব্য, এই হাততালির রেশই বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় ভোট-প্রচারের সুরটা বেঁধে দিয়েছে। সিপিএমের মেমারি ২ জোনাল সম্পাদক অশেষ কোনার বলেন, ‘‘ভিড়ই বলে দিচ্ছে ফল এ বার অন্য রকম হবে।’’ যদিও ভিড়কে পাত্তা দিতে নারাজ মন্তেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজা। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট মাঠে সভা হয়েছে। ভিড় তেমন হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement